আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে একাধিক অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। সেই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবিতে আবেদন করা হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে। শুক্রবার সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানিতে সম্মতি জানাল সর্বোচ্চ আদালত। একসঙ্গে দুটি আবেদনের প্রেক্ষিতে এই শুনানি হবে আদালতে। আইনজীবী এমএল শর্মা এবং বিশাল তিওয়ারির দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এই শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। উভয় জনস্বার্থ মামলাতেই দাবি করা হয়েছে যে হিন্ডেনবার্গ আদানি স্টককে ‘শর্ট-সেল’ করে একটি ষড়যন্ত্র করেছে। এর জেরে বিনিয়োগকারীদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার কারচুপি, বিপুল অঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অভিযোগ তোলা হয়। সেই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে দ্রুত নিম্নমুখী হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ৭টি সংস্থার শেয়ার। এদিকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে LIC-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থারও। এসবিআই সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণও নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তাছাড়া একগুচ্ছ হেভিওয়েট সরকারি প্রকল্পের বরাত রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর হাতে। এই আবহে আদানি ইস্যুতে রাজনৈতিক ভাবে চাপে রয়েছে শাসকদল বিজেপি।
এদিকে এই বিতর্ক প্রকাশ্যে আসতেই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে তলব করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কোন ব্যাঙ্কের আদানি গোষ্ঠীতে কতটা বিনিয়োগ/ঋণ রয়েছে, তার হিসাব দিতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা এই নথি পরীক্ষার প্রক্রিয়া দায়িত্বে নিযুক্ত হন। ভারতের কোম্পানি আইনের ২০৬ নম্বর ধারার অধীনে সমগ্র প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। এই ধারায় সরকার চাইলে কোনও সংস্থার বিগত কয়েক বছরের আর্থিক নথি, যেমন ব্যালেন্স শীট, অ্যাকাউন্টের খাতা পর্যালোচনা করতে পারে। এছাড়া বোর্ড মিটিং, সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ইত্যাদিও পর্যালোচনা করা যায়।
এদিকে ভারতীয় বাজারে ধসের মধ্যে মার্কিন বাজারেও জোরদার ধাক্কা খেয়েছে আদানি গ্রুপ। ডাও জোনসের তরফে জানানো হয়, জনপ্রিয় 'Sustainability Indices' সূচক থেকে আদানি এন্টারপ্রাইজকে হটিয়ে দেওয়া হয়। তবে সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর ফিচ রেটিংয়ের তরফে জানানো হয়, আপাতত আদানি গ্রুপের রেটিংয়ে অবিলম্বে কোনও পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। এই সবের মাঝেই ৪১৩ পৃষ্ঠার বিবৃতিতে পালটা মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল আদানি গোষ্ঠী। আদানির সংস্থার অভিযোগ, শুধুমাত্র কোনও একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে 'অযাচিত হামলা' চালানো হয়নি, বরং ভারতের উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। পাশাপাশি আদানির অভিযোগ, ভুয়ো বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে এই কাজটা করা হয়েছে। এই সব অভিযোগ, পালটা অভিযোগ যাতে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে খতিয়ে দেখা হয়, তা নিয়েই আবেদন করা হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে। এবং সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই শুনানিতে সম্মত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।