একের পর এক মহিলার বিচারপতিকে বরখাস্ত করা সংক্রান্ত একটি মামলায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের কড়া সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সংশ্লিষ্ট মহিলা বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কাজে অদক্ষতার অভিযোগ তুলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও তথ্য বলছে, ওই বিচারপতিদের মধ্যে একজন গর্ভবতী ছিলেন এবং বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর গর্ভপাত হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে শুনানি চলার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগারত্না বলেন, 'আমি আশা করব, এই ধরনের একই মানদণ্ড পুরুষ বিচারপতিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আমার এটা বলতে একটুও দ্বিধাবোধ হচ্ছে না।'
বস্তুত, এই গোটা ঘটনায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের উদাসীনতা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠেছে বিচারতি নাগারত্নার গলায়। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বি ভি নাগারত্না এবং বিচার এন কে সিংয়ের বেঞ্চে।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি নাগারত্না আরও বলেন, 'ওই মহিলা (বিচারপতি) গর্ভবতী হন এবং তারপর তাঁর গর্ভপাত হয়। যে মহিলার গর্ভপাত হয়, তাঁর মানসিক এবং শারীরিক ট্রমা (মারাত্মক)। কী এটা? আমি সত্যি ভাবছি, পুরুষরাও যদি ঋতুমতী হতে পারতেন! তাহলে তাঁরা বুঝতেন, এটা আসলে কী?'
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট মহিলা বিচারপতিদের বরখাস্ত করা সংক্রান্ত এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করেছিল। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের কাছে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, ঠিক কীসের ভিত্তিতে ওই মহিলা বিচারপতিদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওই মহিলা বিচারপতিদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন মাসে। হাইকোর্টের পরামর্শে সেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল রাজ্যের আইন বিভাগের তরফ থেকে।
ওই মহিলা বিচারপতিরা তাঁদের 'প্রবেশন পিরিয়ড'-এ ছিলেন। তার মধ্যেই তাঁরা যে মামলাগুলির মামলা শুনেছিলেন এবং বিচার ও নিষ্পত্তি করেছিলেন, তার ভিত্তিতে তাঁদের কাজের মূল্যায়ন করা হয় বলে দাবি।
এরপর গত অগস্ট মাসে একটি পূর্ণ আদালতে মহিলা বিচারপতিদের বরখাস্ত করার ওই সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা হয় এবং বরখাস্ত হওয়া বিচারপতিদের মধ্যে চারজনকে ফের বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, সেই তালিকায় অদিতি কুমার শর্মা ছিলেন না।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের তরফে দাবি করা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ওই মহিলা বিচারপতির পারফরম্যান্স 'খুব ভালো' থেকে নেমে গিয়ে 'ভালো' হয়। এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তার আরও নামে ও'মধ্যম' থেকে 'খারাপ' হয়।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে সময়টায় ওই বিচারপতির পারফরম্যান্স ক্রমশ পড়তে থাকে বলে দাবি করা হয়, সেই সময়টায় তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন এবং তাঁর গর্ভপাত হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে অদিতি নিজেও সোচ্চার হয়েছেন। হাইকোর্টকে দেওয়া নোটে তিনি জানিয়েছেন, ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তাঁর পারফরম্যান্স ক্রমশ খারাপ হয়েছে, যদি এমনটা বলা হয়, তাহলে সেটা হবে সবথেকে বড় অবিচার।
তিনি আরও দাবি করেন, যেভাবে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা আদতে সমান সুযোগের মতো একটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
অদিতি তাঁর আবেদনে লিখেছেন, 'মাতৃত্বকালীন ছুটি যেকোনও মহিলা এবং তাঁর সন্তানের মৌলিক অধিকার। এটি ইতিমধ্যেই আইনের দ্বারা স্বীকৃত। তাই, এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রবেশন পিরিয়ডে কাজ করছিলেন এবং তারপর মাতৃত্বকালীন ছুটে চলে যান, ঠিক সেই সময়ে এভাবে তাঁর পারফরম্যান্স যাচাই ও মূল্যায়ন করাটা আদতে তাঁকে তাঁর মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত করা।'
অদিতির আরও অভিযোগ, চারবছর ধরে তিনি যে কাজ করেছেন, তাতে কোথাও কোনও খুঁত বা ত্রুটি ছিল না। তারপরও তাঁকে যেভাবে বরখাস্ত করা হয়, তাতে কোনও আইন বা নিয়ম মানা হয়নি।
মঙ্গলবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাগারত্না এই ঘটনায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের অবস্থানের তীব্র ভর্ৎসনা করেন। বলেন, 'ডিসমিস্ড-ডিসমিস্ড, বাড়ি ফিরে যান - এটা বলা খুব সহজ।' মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ ডিসেম্বর।