সালটা ছিল ১৯২০। সেই বছরই পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিল জাতীয় কংগ্রেস। আর, সেই একই বছরে জন্ম হয়েছিল রসিকচন্দ্র মণ্ডলের।
পশ্চিমবঙ্গের মালদার বাসিন্দা রসিক আর কিছুদিন পরই ১০৪ বছর পূর্ণ করবেন। কিন্তু, গত প্রায় তিন দশকের মতো এবারও জন্মদিনটা কারাগারেই 'পালন' করতে হত তাঁকে! শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই বন্দিদশা কাটতে চলেছে তাঁর।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ বৃদ্ধ রসিকের যে 'কাহিনি' নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা যে কারোও নজর কাড়তে পারে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৮ সালে একটি খুনের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার জেরেই ১৯৯৪ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেই সময় রসিকের বয়স ৭৪ বছর। আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনায়।
এরপর ওই বৃদ্ধের ঠাঁই হয় বালুরঘাটের সংশোধনাগারে। কিন্তু, বয়স বেশি হওয়ায় সেখানে ঢোকার পর থেকেই নানা অসুস্থতা দেখা দেয় রসিকের মধ্যে। যার জেরে সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন রসিক। কলকাতা হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে ২০১৮ সালে। এবং পরবর্তীতে রসিক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
দেখতে দেখতে ২০২০ সাল চলে আসে। করোনাকালে শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান অতি বৃদ্ধ রসিকচন্দ্র মণ্ডল। এই সময় তিনি ফের আদালতের দ্বারস্থ হন।
এবার তাঁর যুক্তি ছিল, ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বহু ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন বলতে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বোঝায়। তিনি তার থেকে অনেক বেশি সময় কাটিয়েছেন জেলে। এখন তাঁর বয়স হয়েছে, অসুস্থতা আরও বেড়েছে। এবার অন্তত তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক। যাতে জীবনের শেষ সময়টুকু পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে পারেন।
তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টে উপরোক্ত যুক্তি সামনে রেখে রিট পিটিশন দাখিল করিয়েছিলেন ১০০ ছুঁই ছুঁই রসিক। সেই মামলা উঠেছিল বিচারপতি আবদুল নাজির (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার (বর্তমানে ভারতের প্রধান বিচারপতি) বেঞ্চে। দিনটি ছিল ২০২১ সালের ৭ মে।
আবেদনকারীর বক্তব্য খতিয়ে দেখে সেদিন শীর্ষ আদালত পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগারের সুপারিনটেন্ডেন্টকে নির্দেশ দেয়, ওই বন্দির শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে আদালতকে তার রিপোর্ট দিতে হবে। উল্লেখ্য, ওই সংশোধনাগারটিতে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে রসিককে এনে রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর, ২০২৪) সেই মামলা শুনানির জন্য ফের সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। এবারও বিচারপতির আসনে ছিলেন সঞ্জীব খান্না। প্রধান বিচারপতির সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার।
রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আশা শর্মা। তিনি জানান, অতিরিক্ত বয়সের কারণে কিছু সমস্যা থাকলেও এমনিতে রসিকচন্দ্র মণ্ডলের অবস্থা স্থিতিশীল। এবং শীঘ্রই তিনি তাঁর ১০৪ বছরের জন্মদিন পালন করতে চলেছেন।
একথা শোনার পরই আদালত শতায়ু বৃদ্ধের আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়। প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের ৯ নভেম্বর যে খুনের মামলাটি রুজু হয়েছিল, সেটি দায়ের করা হয়েছিল মালদার মানিকচক থানায়। আদালত রসিককে সেই মামলাতেই অন্তর্বর্তী জামিন দেয়।