মামলা উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী ও আর মাধবনের বেঞ্চে। মামলা ছিল ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসা এক ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে। সেই মামলায় ২০১৯ সালের উল্লেখ করে ব্যক্তির ভারতের নাগরিকত্ব অনুমোদন করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সিএএ অনুযায়ী, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা ওই দেশগুলির সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানরা যাঁরা ভারতে ২০১৪ সালের আগে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের কাছে বৈধ নথি না থাকলেও, ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলা যাবে না, বলে বিধান রয়েছে। আর এই আইন তুলে ধরেই ওই ব্যক্তি এই মামলায় স্বস্তি পেলেন তাঁর নাগরিকত্বের প্রশ্নে।
ঘটনার শুরু ১৯৬৯ সালে। সেই সময় বাবার সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর বয়স তখন ১৬। এদিকে, ভারতের কাছে তিনি বাবার অভিবাসন সার্টিফিকেটের প্রেক্ষিতে নিজের নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটেরও আবেদন করেন। তার অনুমতি চাওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পান। এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি পান। ১৯৮৫ সালে তিনি চাকরি পেলেও, চাকরির ২৫ বছর পর তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট জমা দেন। নিয়ম অনুসারে চাকরিতে যোগের ৩ মাসের মাথায় সেই সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার কথা। তবে ২৫ বছরের বেশি সময় পর তিনি তা জমা দেন ২০১০ সালে। রিপোর্টে দেখা যায় আবেদনকারী ‘আন সুটেবল’ (অযোগ্য) বলে লেখা রয়েছে, কারণ তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণিত হয়নি। তাঁকে ২০১১ সালে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাঁর চাকরিকালীন সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর হাইকোর্ট পার করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
আবেদনকারীর দাবি ছিল, তিনি বাবার অভিবাসন নথি দেখিয়েই এই নাগরিকত্বের জন্য সার্টিফিকেটের আবেদন করেন। যদিও রাজ্য বলছে, মাইগ্রেফসন সার্টিফিকেট বা অভিবাসন সার্টিফিকেট একা প্রমাণ করে না যে তিনি ভারতীয় নাগরিক, বলা হয়, আবেদনকারীকে প্রশাসনের নির্দিষ্ট পন্থায় নথিভূক্ত করতে হবে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে। এই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট সিএএ প্রসঙ্গ তোলে। কোর্ট বলছে,' ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্যক্তি যিনি অবিভক্ত ভারতের বাইরের কোনও দেশ বা স্থানের একজন সাধারণ বাসিন্দা তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী।' কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এই তাৎক্ষণিক মামলায়, আপীলকারী দাবি করেছেন যে তার দাদু-দিদা তাঁদের জন্মের কারণে ভারতীয় নাগরিক। নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিধানগুলি ভারতের সংবিধানের পার্ট II তে ৫ থেকে ১১ অনুচ্ছেদের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এর ধারা ৪, আপিলকারীর বাবাকে বংশোদ্ভূত নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করার অধিকার দেয়। আপীলকারীও আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী।'