কোভিডের জেরে মা, বাবা হারানো শিশুদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও কেন শেষ হয়নি? গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের এই প্রশ্নেই বিদ্ধ হল রাজস্থান সরকার। পাশাপাশি কোভিডে মৃতদের পরিবার এবং কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আত্মহত্যা করা ব্যক্তিদের পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল রাজস্থান সরকারের। তবে সেই ক্ষতিপূরণও দেয়নি সরকার। এই আবহে রাজস্থান সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
চলতি মাসেই রাজস্থা সরকারের জমা দেওয়া কোভিড ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত হলফনামায় নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ মতো অবিলম্বে যোগ্য ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে এখনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি রাজস্থান সরকার। এই আবহে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জমা পড়া বকেয়া আবেদন নিয়ে পদক্ষেপ করতে রাজস্থান সরকারকে আর মাত্র দুই সপ্তাহ সময় দিল শীর্ষ আদালত।
গত শুক্রবার কোভিড ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় জাস্টিস এমআর শাহ এবং জাস্টিস শুধাংশু ধুলিয়াঁর বেঞ্চে। রাজস্থান সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়, রাজ্যে কোভিডে অনাথ হওয়া ২১৩ জন শিশুর মধ্যে ১৯১ জনকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। যে ২২ জন বাকি রয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করছে সরকার। রাজ্যের মুখ্য সচিব এই নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন। এদিকে রাজ্যের আইনজীবীর দাবি, কোভিড ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো আরও ৭১৮ জন শিশু কোভিডের কারণে অনাথ হয়নি। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হলে রাজ্যকে নয়া নীতি চালু করতে হবে যাতে সব অনাথকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। এদিকে সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতকে আরও জানানো হয়, কোভিডে মৃত্যু হওয়া ১৯ হাজার ৯১৪ জনের পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ১৭৭৩ জনের কোভিড ক্ষতিপূরণের দাবি খারিজ করা হয়েছে। খারিজ আবেদনের বিশদ ‘ন্যাশনাল লিগাস সার্ভিস অথরিটি’র কাছে জমা করা হয়েছে বলে জানায় রাজস্থান সরকারের আইনজীবী। এদিকে সরকারি আইনজীবী জানান, ৭৫৭ জনের পেমেন্ট এখনও আটকে আছে বিভিন্ন কারণে। এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে আইনজীবী জানান, ‘ডিরেক্ট ট্রান্সফার না হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।’ এরপরই বিচারপতি এমআর শাহ পালটা বলেন, ‘আমরা তো ডিরেক্ট ট্রান্সফার বলেছিলাম।’ জবাবে রাজস্থান সরকারের আইনজীবী নয়া অ্যাকাউন্ট খোলার ঝক্কির কথা বলতে গেলে বিচারপতি শাহ বলেন, ‘নতুন অ্যাকাউন্ট কেন খুলতে হবে, যে অ্যাকাউন্ট আছে, তাতেই তো টাকা পাঠানো যায়।’
এদিকে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর আত্মহত্যার সংখ্যা নিয়ে ‘অনিয়মে’র অভিযোগ উঠেছে। রাজস্থান সরকারের হিসেব বলছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ৯ হাজার লোক এক মাসের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৮০৪৭ জনের ক্ষতিপূরণের আবেদনকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের এক রায়ে এই ধরনের আত্মহত্যাকে কোভিড মৃত্যু হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, ‘একটি রাজ্যে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর ৮০৫৭ জনের আত্মহত্যা কীভাবে হতে পারে?’