বুধবার অসমের কামাখ্যা মন্দিরের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি। দুই বিচারপতিই বলেন, ‘অসমের কামাখ্যা মন্দিরের ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না।’ বিচারপতি অজয় রাস্তোগি এবং বিচারপতি সিটি রবিকুমারের বেঞ্চ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত একটি বিষয়ে শুনানির সময় পর্যবেক্ষণ করেন, ‘মন্দিরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনওভাবেই আপস করা যাবে না।’
কামাখ্যা মন্দিরের পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি হচ্ছিল শীর্ষ আদালতে। সেই সময় প্রবীণ আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান মন্দিরের পক্ষে উপস্থিত হয়ে আদালতে বলেন, ‘মাত্র কয়েকজন লোক চিঠি লিখে দাবি করেছেন যে মন্দিরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে যত্ন নেওয়া হচ্ছে না।’ এই আবহে বিচারপতি অজয় রাস্তোগি বলেন, ‘আমি ছুটির সময় সেখানে (কামাখ্যা মন্দির) ছিলাম। মন্দিরটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনও আপস করা যায় না।’
পরে মন্দির পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেন যে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) এর মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করতে সর্বোচ্চ আদালত ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে দুই পক্ষকে। মামলার শুনানি ততদিন স্থগিত রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।
কামাখ্যা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত আইনি বিষয়টি বহু পুরনো। ঐতিহাসিকভাবে, এই স্থানটি বোরদিউড়ি সম্প্রদায়ের পুরোহিতদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। নব্বইয়ের দশকে প্রধান পুরোহিত নির্বাচন নিয়ে এই সমাজের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা হয়। যে গোষ্ঠী ইতিমধ্যে মন্দিরটি দখল করেছে তারা ১৯৯৮ সালে অসম দেবত্তর বোর্ড নামে একটি সংগঠন গঠন করে এবং মন্দির পরিচালনার কাজ বজায় রাখে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই বোর্ডটি ভেঙে দেয় এবং বোরদিউড়ি সমাজের কাছে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও দুই পক্ষের মধ্যে রেষারেষি চলতে থাকে। ২০১৭ সালে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত কবীন্দ্র প্রসাদ শর্মা একটি পিটিশন দাখিল করেন এবং অসম দেবত্তর বোর্ডের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন যে মন্দিরের অনেক স্থাবর সম্পত্তি এখনও বোর্ডের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হিসেবের খাতাও হস্তান্তর করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এখন সুপ্রিম কোর্টে চিঠির মাধ্যমে মন্দিরে অরাজকতা ও অশান্তি নিয়ে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।