১০ বছরের বালিকার উপর একাধিকবার যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। তামিলনাড়ুর সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
সোমবার গত ২৯ অক্টোবরের সেই রায় বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বদলে, সেই মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যার জের গড়াল পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত। এ রাজ্যের একটি মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর জারি করা হল স্থগিতাদেশ।
প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুর ঘটনায় যেভাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিশ 'আক্রান্ত' বালিকার সঙ্গে আচরণ করেছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে আদালত।
এই মামলায় তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বরিষ্ঠ আইনজীবী মুকুল রোহতগি।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলাকালীন আইনজীবী রোহতগি দাবি করেন, এই ঘটনায় চেন্নাই পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগেই তারা এফআইআর দায়ের করেছে।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শীর্ষ আদালত এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বাতিল করে সিট গঠন করে তদন্তের প্রস্তাব দিতেই রাজ্য সরকারের আইনজীবী তা মেনে নেন।
যদিও চেন্নাই পুলিশের দক্ষতা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলেছে। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ হল - প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পুলিশ এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ভুল পথে চালিত হয়েছে। এবং এর জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের অসংবেদনশীল আচরণকেই দায়ী করা হয়েছে।
অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আদালত বলেছে, 'আমরা তদন্তকারীদের নিয়ে মোটেও খুশি নই।'
এরপরই তামিলনাড়ু সরকারের উদ্দেশে আদালত কিছু নির্দেশ দেয়। বলা হয়, রাজ্য সরকারকে এমন সাতজন আইপিএস আধিকারিকের নাম প্রস্তাব করতে হবে, যারা পদোন্নতির ভিত্তিতে আইপিএস হননি। সরাসরি আইপিএস আধিকারিক হিসাবেই কাজে যোগ দিয়েছেন।
ওই সাত আইপিএস তামিলনাড়ুর প্রকৃত বাসিন্দা হলে চলবে না। এমন সাতজনকে বাছাই করতে হবে, যাঁরা আদতে অন্য রাজ্যের মানুষ। কিন্তু, কর্মসূত্রে বর্তমানে তামিলনাড়ুতে রয়েছেন।
এই সাতজন আইপিএস আধিকারিকের মধ্যে অন্তত তিনজন মহিলা আইপিএস থাকতে হবে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৮ নভেম্বর। ওই দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকারকে সাত আইপিএস আধিকারিকের নাম শীর্ষ আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে, এই ঘটনায় মামলা-সহ সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ায় যত খরচ হবে, রাজ্য সরকারকেই সেই ব্যায়ভার বহন করতে হবে বলেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে।
এই রায়দানের কয়েক ঘণ্টা পরই শীর্ষ আদালতের কাছে একটি মামলা নিয়ে বিশেষ অনুরোধ করেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবল। সেই মামলাটি ছিল এ রাজ্যের - অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের।
উল্লেখ্য, বাংলার এক সাংসদের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে, ওই দুই মহিলা দাবি করেন, গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কিন্তু, সোমবার তামিলনাড়ুর ঘটনায় শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করতেই, পশ্চিমবঙ্গের এই মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করার আবেদন জানান আইনজীবী কপিল সিবল।
শীর্ষ আদালত এই আবেদন মেনে নেয়। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থাগিতাদেশ জারি করে - যে নির্দেশে এই মামলায় সিবিআই তদন্ত শুরু করার কথা বলা হয়েছিল।
একইসঙ্গে, এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যে তদন্ত করছে, তার উপরেও স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
তার বদলে, আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এমন সাতজন আইপিএস আধিকারিকের নাম চাওয়া হয়, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত হলেও আদতে অন্য রাজ্যের বাসিন্দা।