ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই ও বাইজুসের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল, বুধবার তা বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে কার্যত 'দেউলিয়া' হয়ে যাওয়া এড-টেক সংস্থা বাইজুসের সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এই মামলায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, তাদের সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে দেউলিয়া সংক্রান্ত নীতি বা কোড (আইবিসি)-এর অধীনে, ঋণদাতাদের কমিটি (সিওসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।
একইসঙ্গে, আদালত এও বলেছে, আগের সমস্যার নিষ্পত্তি করতে বাইজুস ইতিমধ্যেই বিসিসিআই-কে ১৫৮ কোটি টাকা মিটিয়েছিল, সেই অর্থ একটি এসক্রো অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করতে হবে। যে অ্য়াকাউন্টটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঋণদাতাদের কমিটির হাতে।
বুধবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করেছে। উল্লেখ্য, এর আগে বাইজুসকে মোটা অঙ্কের ঋণ দিয়েছিল আমেরিকার সংস্থা 'গ্লাস ট্রাস্ট'। বাইজুস যেভাবে তড়িঘড়ি বিসিসিআই-এর সঙ্গে মীমাংসায় যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, তাতে আপত্তি জানিয়েছিল তারা।
যেভাবে বাকি সমস্ত ঋণদাতার তুলনায় বিসিসিআই-কে নিয়ে বাইজুস অধিক তৎপর ছিল, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সংশ্লিষ্ট মার্কিং সংস্থা। বুধবার আদালত স্পষ্ট করে দেয় যে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করার বা আপত্তি জানানোর মতো আইনি অধিকার ওই মার্কিন সংস্থার রয়েছে। আর তারপরই এদিন উপরোক্ত নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় গত ২ অগাস্ট একটি রায় ঘোষণা করে ভারতের ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবিউন্যাল (এনসিএলএটি)। সেই রায় হাতিয়ার করেই বিসিসিআই-এর সঙ্গে সমঝোতার রাস্তায় হাঁটে বাইজুস। যাতে বাইজুসকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করার পথে বাধা তৈরি করা যায়।
কিন্তু, বুধবার গত ২ অগাস্টের সেই রায় খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। ফলত, বাইজুসকে (খাতায়-কলমে যে সংস্থার নাম - থিঙ্ক অ্যান্ড লার্ন প্রাইভেট লিমিটেড) দেউলিয়া ঘোষণা করার পথ আরও প্রশস্থ হল।
এদিনের বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন - বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রা। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ হল, গত ২ অগাস্ট এনসিএলটি যে রায় দিয়েছিল, তাতে ভুল ছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে বাইজুসের বিরুদ্ধে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আবেদনপত্র জমা করেছিল বিসিসিআই। কিন্তু, এনসিএলটি গত ২ অগাস্টের রায়ে বিসিসিআই-কে তাদের সেই আবেদন প্রত্যাহার করার অনুমতি দেয়। যা সঠিক ছিল না বলে বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
অন্যদিকে, মার্কিন সংস্থা গ্লাস ট্রাস্টের আইনি অবস্থান নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বাইজুস। তাদের সেই আপত্তিও আদালত খারিজ করে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বাইজুসকে অতীতে ১০২ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল গ্লাস ট্রাস্ট।
তাই, শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, এই ঘটনায় গ্লাস ট্রাস্ট কখনই সম্পর্কহীন পক্ষ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। বিশেষ করে যেখানে বাকি সমস্ত ঋণদাতাকে পাশ কাটিয়ে ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই-কে টাকা মেটানোর বিষয়টি সামনে আসছে।
এরই ফলস্বরূপ, আদালত গ্লাস ট্রাস্টের আবেদন গ্রহণ করে এবং বাইজুসের সঙ্গে বিসিসিআই-এর সমঝোতা বাতিল করে দেয়।