ফের একবার শীর্ষ আদালতে চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-কে। সুপ্রিম কোর্টের কঠোর পর্যবেক্ষণ, ইডি আসলে মানুষকে কারাগারে আটকে রাখতে চায়। বুধবার একটি মামলার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে আর্থিক তছরুপ সংক্রান্ত যে আইন (পিএমএলএ) রয়েছে, তার অধীনে ইডি এমন কিছু বক্তব্য পেশ করছে (সাবমিশন), যা আইনবিরোধী বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত। যদিও ইডি-র দাবি, সংশ্লিষ্ট মামলায় 'ভুলবশত' ওই বক্তব্য পেশ করা হয়েছে! কিন্তু, আদালত এই তত্ত্ব মানতে নারাজ।
আদালতের বক্তব্য হল, এই ধরনের মামলায় অভিযুক্তদের - এমনকী অভিযুক্তদের তালিকায় কোনও নাবালক, মহিলা বা অসুস্থ ব্যক্তি থাকলেও, যাতে সেই অভিযুক্তদের অনন্তকালের কারাগারে আটকে রাখা যায়, তা নিশ্চিত করতেই ইডি এই ধরনের বক্তব্য পেশ করছে। এবং আদালত কিছুতেই সেটা বরদাস্ত করবে না।
সংশ্লিষ্ট মামলায় ইডি-র কৌশলী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি দাবি করেন, একজন আইনি আধিকারিকই ভুলবশত আদালতে ওই বক্তব্য পেশ করেছিলেন। তবে তিনি এও দাবি করেন, যদি অভিযোগ গুরুতর হয়, তাহলে অন্তত এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনও রকম নরম মনোভাব দেখানো উচিত নয়। কিন্তু, শীর্ষ আদালত সলিসিটর জেনারেলের এই মন্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার শেষ শুনানির দিন ছিল। সেদিন ইডি-র হয়ে একজন আইনি আধিকারিক আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি আদালতকে বলেন, যদি কোনও অভিযুক্তের বয়স ১৬ বছরের কম হয়, কিংবা অভিযুক্ত যদি কোনও মহিলা বা অসুস্থ ব্যক্তি হন, তাহলেও পিএমএলএ-র ৪৫ নম্বর ধারার (১) নম্বর উপধারার অধীনে সেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করা যেতে পারে।
ইডি-র সেই আইনি প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট মামলায় শশী বালা নামে এক অভিযুক্তের জামিনের কঠোর বিরোধিতাও করেন। শাইন সিটি গোষ্ঠী দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পিএমএলএ-র অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে। ইডি-র দাবি, এই অভিযুক্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। অথচ, তাঁর বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। যা মোটেও তাঁর আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অন্যদিকে, পিএমএলএ-র ৪৫ নম্বর ধারার (১) নম্বর উপধারাই বলছে, যদি বিশেষ আদালত নির্দেশ দেয়, তাহলে উপরোক্ত অভিযুক্তরাও জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।
এই প্রেক্ষাপটে শীর্ষ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ হল, গত ১৯ ডিসেম্বর ইডি-র আইনি প্রতিনিধি আদালতে যে সাবমিশন (বক্তব্য পেশ) করেছিলেন, তা 'একেবারেই ফালতু'। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, 'আমরা আইন বিরুদ্ধ এই ধরনের কোনও সাবমিশন বরদাস্ত করব না।'
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সলিসিটর জেনারেল বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করেন। জানান, যা হয়েছে একেবারেই ভুলবশত হয়েছে। আসলে সংশ্লুষ্ট পক্ষের মধ্য়ে 'যোগাযোগের অভাব'-এর কারণেই এমনটা ঘটেছে।
কিন্তু, আদালত এই যুক্তি মানেনি। বদলে কড়া মন্তব্য করে জানিয়েছে, ওই আইনি আধিকারিকের মন্তব্য ও যুক্তি শুনে মনে হচ্ছিল, সরকার আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের শুধু কারাগারে আটকে রেখে দিতে চায়!
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট মামলা অভিযুক্ত মহিলা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলবন্দি হয়ে রয়েছেন। এবং তদন্তের যা হাল, তাতে দ্রুত শুনানি শুরু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই আদালত শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে এবং তাঁকে নিজের পাসপোর্ট জমা রাখতে বলে।