পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কার্ড দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির গা-ছাড়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। এহেন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার এই প্রসঙ্গে জারি করা নির্দেশিকায় আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, দেশের প্রত্যেকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার তথা প্রশাসনকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্য়েই স্থানীয় পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কার্ড দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সচিব এবং গণবণ্টন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায় তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, আদালতের তরফে আগেও একাধিকবার এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ই-শ্রম পোর্টালে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত রয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের হাতে রেশন কার্ড তুলে দিতে হবে।
অভিযোগ, এরপরও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসন সেই কাজ শেষ করেনি। তাদের যুক্তি, তারা নাকি আবেদনকারীদের পরিচয় যাচাই করে দেখছে। যে কাজ আজ এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি। উপরন্তু, যাঁদের পরিচয় যাচাই হয়ে গিয়েছে, সেই পরিযায়ী শ্রমিকরাও হাতে রেশন কার্ড পাননি।
এই ঘটনা নজরে আসতেই শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনকে।
শুক্রবার শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। আবেদনকারীদের বক্তব্য শুনে এবং সবদিক খতিয়ে দেখে বেঞ্চের তরফে কঠোর নির্দেশিকা জারি করা হয়।
আদালত বলে, 'রেশন কার্ড ইস্যু করতে কত সময় লাগে! আমরা আপনাদের শেষবারের মতো সুযোগ দিচ্ছি, এই কাজ সম্পন্ন করার। তা না হলে আপনাদের সচিবদের আদালতে এসে হাজিরা দিতে হবে।'
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৯ নভেম্বর। সেই প্রেক্ষিতে বেঞ্চের তরফে বলা হয়, 'আমরা আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছি না। আমাদের লক্ষ্য হল, গরিব মানুষের হাতে রেশন তুলে দেওয়া। আমরা একেবারে স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, এই বিষয়ে আর কোনও অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না।'
সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, 'যেসব রাজ্যে ইতিমধ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু তারপরও তাঁদের রেশন কার্ড দেওয়া হয়নি, সেইসব রাজ্যের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট সচিবের উপস্থিতিতে আদালতে হলফনামা পেশ করে জানাতে হবে, কেন তারা এই কাজ করতে ব্যর্থ হল।'
এদিকে, এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারগুলিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রকে যেভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। যদি কোথাও কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তাহলে রাজ্য সরকার যদি আমাদের সাহায্য চায়, আমরা অবিলম্বে সেই সাহায্য তাদের করব।'
এরপর আদালত কেন্দ্রের আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, 'গরিব মানুষ যে রেশন পাচ্ছে না, এই বিষয়টি কি আদৌ আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? নাকি এটা আপনাদের কাছে কোনও ইস্যুই নয়?'
এরপরই রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উদ্দেশে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, 'যাঁরা রেশন কার্ড পাবেন, তাঁরা সকলেই যেন তাঁদের জন্য বরাদ্দ রেশন পান। শুনানির পরবর্তী তারিখের মধ্যে যদি এই কাজ না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব বা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হয়ে জানাতে হবে, কেন যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আবেদনকারীরা রেশন কার্ড পাচ্ছেন না।'