পুরুষদের জন্য জন্মনিরোধক ওযুধ নিয়ে বেশ কিছু কাল গবেষণা চলেছে। এবার তার জেরে আবিষ্কৃত ভেষজ ওষুধ কাজে লাগিয়ে পুরুষের শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা হ্রাস করার পাশাপাশি ভায়াগ্রালব্ধ ফলও মিলেছে।
প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে পুরুষদের জন্মনিরোধক ওযুধ আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাংগা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক বামবাং প্রাজোগো এবং অধ্যাপক ডায়ান প্রামেস্তি। জাস্টিসিয়া জেন্ডারুসা নামে এক প্রজাতির ঝোপের নির্যাস তাঁদের গবেষণার মূল উপাদান।
জানা গিয়েছে, সুদূর অতীতে স্ত্রীদের গর্ভসঞ্চার রুখতে এই ঝোপের পাতা ফুটিয়ে সেই রস খাওয়ার চল রপ্ত করেছিলেন পাপুয়া নিউগিনি দ্বীপপুঞ্জবাসী এক জনজাতির পুরুষ সদস্যরা। প্রাচীন কাল থেকেই ওই অঞ্চলে জন্মনিরোধ করতে এই দাওয়াইয়ের প্রচলন হয়, যার কোনও নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা সহযোগী পর্ষদ এবং এয়াপলাংগা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে জাস্টিসিয়া জেন্ডারুসা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এই গাছের নির্যাসের রাসায়নিক বিক্রিয়াকরণ ঘটিয়ে ক্যাপসুলের আকারে তৈরি হয়েছে পুরুষদের জন্মনিরোধক ওযুধ। গবেষণায় জানা গিয়েছে, গাছের নির্যাসে উপস্থিত রাসায়নিক শুক্রাণুর মাথায় থাকা উত্সেচককে অকেজো করতে সক্ষম। এর জেরে শুক্রাণু শ্লথ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, যার জেরে তা ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়।
মোট ১২০টি দম্পত্রি উপরে নতুন আবিষ্কৃত ওষুধটি ১০৮ দিন প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, যৌন মিলন সত্ত্বেও গর্ভসঞ্চার রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এর পরে ফের ৩৫০টি যুগলের উপরে এই ওষুধ প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়। এই পর্বে ১৮৬টি যুগল ওই ক্যাপসুল ব্যবহার করেন এবং ১৬৪টি যুগল এক মাস যাবত্ ক্যাপসুল ছাড়া গবেষনালব্ধ পদার্থ ব্যবহার করেন। দেখা গিয়েছে, দুই ক্ষেত্রেই ওষুধটি জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছে। পাশাপাশি, বেশ কয়েক জনের মধ্যে ভায়াগ্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতোই যৌনলিপ্সা বৃদ্ধি পেতেও দেখা গিয়েছে।
গবেষক দল জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় এই ওষুধ বাণিজ্যিক ভাবে চালু করে সুফল মিলেছে। এবার তা বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে সে দেশের উত্পাদক সংস্থাগুলি। তবে সমালোচকদের একাংশের দাবি, এই ক্যাপসুল নিয়মিত ব্যবহার করলে পুরুষের দৈহিক ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। আপাতত তা ঠেকাতে শুরু হয়েছে গবেষণা।