মঙ্গলের পরে এবার বুধ গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার আভাস পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ওই গ্রহের আকাশে ভাসমান মেঘে থাকা ঝাঁঝালো গ্যাসে আনুবীক্ষণিক প্রাণের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধ গ্রহের পিঠ থেকে ৩০ মাইল উপরে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান মেঘের মধ্যে বিশেষ এক রকম গ্যাস খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রাণের উপস্থিতি ছাড়া থাকা প্রায় অসম্ভব। তাঁদের দাবি, একদা এই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল, যার অবশিষ্টাংশ উপস্থিত রয়েছে ওই গ্যাসে। উষ্ণায়নের কারণে পরবর্তীকালে বুধের চরিত্রে পরিবর্তন ঘটায় তা প্রাণরক্ষার অনুপযোগী হয়ে পড়ে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, ২ কোটি বছর ধরে বুধগ্রহের আবহাওয়া প্রাণ সঞ্চারের অনুকূল ছিল এবং সেখানে একটি মহাসাগরের উপস্থিতিও ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই গ্রহের পরিমণ্ডলে ঘনীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইডের আধিক্য এবং প্রায় জলশূন্য মাটির ফলে সর্বাধিক তাপমাত্রা পৌঁছায় ৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বুধের আকাশে যে মেঘ ভেসে বেড়ায় তার ৯০% আসলে সালফিউরিক অ্যাসিডের কণা।
আবহাওয়া ও পরিমণ্ডলের এই চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর চরিত্রের ফলে বুধগ্রহকে ‘মৃত’ মনে করেন বিজ্ঞানীরা। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপিকা জেন গ্রিভসের মতে, ‘পরিমণ্ডলে এত বেশি মাত্রায় সালফিউরিক অ্যাসিড থাকার কারণে বুধে প্রাণের সম্ভাবনার আভাস সত্যিই বিস্ময়কর। কিন্তু সমস্ত ভূতাত্ত্বিক ও ফোটোকেমিক্যাল রীতি ব্যবহার করেও আমরা ওই গ্রহের পরিমণ্ডলে ফসফাইন গ্যাসের চরিত্র এখনও খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারিনি।’
পৃথিবীতে কম অক্সিজেন মাত্রাযুক্ত জায়গা, যেমন হ্রদের পলি ও পশুদেহের অভ্যন্তরীণ অংশে ফসফাইন গ্যাস উৎপাদন করে আনুবীক্ষণিক প্রাণীরা। অন্য যে উপায়ে এই গ্যাস সৃষ্টি হয়ে থাকে, যেমন বৃহস্পতি ও শনিগ্রহে- তা বুধের মতো পাথরসর্বস্ব গ্রহে খুঁজে পেলে প্রাণের অস্তিত্বের অন্যতম নির্ণায়ক হিসেবে ধরা হয়।
গ্রিভস জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি প্রথম বুধের পরিমণ্ডলে ফসফাইন গ্যাসের অস্তিত্ব দেখতে পান। দেখা যায়, বুধের আকাশে ভেসে থাকা মেঘে প্রতি কোটি অনুতে ২০টি ফসফাইন অনুর উপস্থিতি রয়েছে।
তবে পরিচিত উৎস ছাড়া অন্য কোনও উপাদান থেকেও ওই গ্রহে ফসফাইন গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের একাংশের মতে, আগ্নেয়গিরি, বজ্রপাত ও উল্কা বৃষ্টির জেরেও গ্রহের পরিমণ্ডলে ফসফাইন তৈরি হতে পারে।
জ্যোতিঃরসায়নবিদ পল রিমারের অবশ্য বক্তব্য, ফসফাইন উৎপাদনের মাত্রা এত কম এবং তা ধ্বংসের পরিমাণ এতই বেশি যে, বুধ গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার অনুপাত প্রতি হাজারে নগণ্য পরিমাণ থাকতে পারে। প্রাণের উপযোগী করে তুলতে ওই গ্রহের পরিমণ্ডলে পৃথিবীর প্রতিটি আনুবীক্ষণিক গ্রাণীকে নিজের ক্ষমতার ১০ গুণ বেশি ফসফাইন উৎপাদন করতে হবে, যা অকল্পনীয়।