পুলিশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যৌন হয়রানি মামলায় নিগৃহীতার দেওয়া গোপন জবানবন্দি কোনও মতেই অভিযুক্তকে জানানো যাবে না। সম্প্রতি এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের এই রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন নিগৃহীতা ও তাঁদের পরিবার। এতদিন পর্যন্ত, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুসারে বিচারকের সামনে উপস্থিত হয়ে নিগৃহীতার দেওয়া গোপন জবানবন্দি অভিযুক্তর থেকে আড়াল করার কোনও পথ ছিল না।
মনে রাখতে হবে, ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থা মামলায় নিগৃহীতার দেওয়া ওই বয়ানই সবচেয়ে মূল্যবান সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। আইন অনুসারে, পরবর্তীকালে গোপন জবানবন্দি প্রত্যাহার করলে তা খারিজ করার পাশাপাশি শপথ গ্রহণ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অপরাধে মামলাকারীর বিরুদ্ধে আইনি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে পারে আদালত।
ঘটনা হল, এ হেন গুরুত্বপূর্ণ নথির গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এত দিন পর্যন্ত বিশেষ কোনও ব্যবস্থা বহাল ছিল না ফৌজদারি কার্যবিধিতে। উলটে ২০১৪ সালে কর্নাটক রাজ্য বনাম শিবান্না মামলার রায়ে গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নকল অভিযুক্তকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টই।
২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্টের দেওয়া এক রায়ের জেরেই বৃহস্পতিবার গোপন জবানবন্দি সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুরে একটি যৌন হয়রানির অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক তরুণী। মামলায় নির্যাতিতার গোপন বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছিল২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। পরের দিনই সেই জবানবন্দির স্বীকৃত নকল চেয়ে আবেদন জানান অভিযুক্ত চিন্ময়ানন্দ। যদিও সেই আর্জি খারিজ করে দেন শাহজাহানপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক। তার জেরে চিল্ময়ানন্দকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে ৫ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
এর পর ৭ নভেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্টে গোপন জবানবন্দির জন্য আবেদন জানালে ১৬৪ ধারায় চিন্ময়ানন্দের আর্জি মঞ্জুর করে হাই কোর্ট এবং তাঁর হাতে বয়ানের নকল তুলে দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের সেই রায় খারিজ করে এ দিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ওই মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ের সম্পূর্ণ অপভ্যাখ্যা করা হয়েছে। বিশেষ করে যৌন হেনস্থার মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মামলায় আদালতকে সাহায্যকারী আইনজীবী সত্য মিত্রের মতে, শ্লীলতাহানি বা যৌন হয়রানির মামলায় তাঁদের দেওয়া জবানবন্দির গোপনীয়তা যে সযত্নে রক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে এবার আশ্বস্ত হতে পারবেন নিগৃহীতারা।