ইদানীংকালে হঠাৎ করেই দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন শতাব্দীপ্রাচীন মসজিদের সমীক্ষা করানো হচ্ছে। যার উদ্দেশ্য হল, অতীতে কোনও কালে ওই সমস্ত মসজিদের নীচে মন্দির ছিল কিনা, তার প্রমাণ জোগাড় করা! যা নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তির আগুন।
এমনই এক প্রেক্ষাপটে সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হলেন দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম সইদ আহমেদ বুখারি। দেশের প্রশাসনিক প্রধানের উদ্দেশে এক আবেগঘন বার্তা পাঠালেন তিনি! প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বললেন, 'দেশের মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলুন'।
শুক্রবারের সাপ্তাহিক প্রার্থনার সময়েই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই বার্তা দেন শাহি ইমাম। একইসঙ্গে, মুসলিম যুব সম্প্রদায়কে আরও বেশি করে ধৈর্য্য ধরার এবং শান্ত থাকারও আর্জি জানান তিনি।
এদিন মোদীর উদ্দেশে বুখারি বলেন, 'আপনি যে আসনে বসে আছেন, সেটির প্রতি আপনার সুবিচার করা উচিত। মুসলমানদের হৃদয় জয় করুন। যে দুষ্কৃতীরা উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে এবং দেশের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের আটকান।...'
বুখারি আরও বলেন, '...আমরা এখন এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছি, যা ১৯৪৭ সালের থেকেও শোচনীয়। কেউ জানে না, আগামী দিনে এই দেশের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে।' এদিন জামা মসজিদে দাঁড়িয়ে শাহি ইমাম যখন একথা বলছেন, তখন তাঁর দুই চোখ জলে ভরে গিয়েছে!
অশান্তি দূর করতে প্রধানমন্ত্রী যাতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করেন, সেই আহ্বান জানিয়েছেন শাহি ইমাম। তাঁর বার্তা, প্রয়োজনে তিনজন হিন্দু ও তিনজন মুসলমানকে একসঙ্গে এনে আলোচনা করা হোক। যাতে উত্তেজনা প্রশমন করা যায়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি হিন্দু সংগঠনের আবেদনের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত একটি নির্দেশিকা জারি করে। যাকে হাতিয়ার করে গত ২৪ নভেম্বর সম্ভল জেলায় অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত শাহি জামা মসজিদে সমীক্ষা চালানো হয়। সেই সমীক্ষা রুখতে প্রতিবাদে সামিল হন স্থানীয় মুসলিমরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তাঁরা। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই এলাকা।
সেই ঘটনার পর দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমামের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই আহ্বান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বুকারি এদিন আরও বলেন, 'এএসআই আমাদের বলেছে, তারা মোটেও দিল্লির জামা মসজিদের সমীক্ষা করতে চায় না। কিন্তু, সরকার সম্ভল, আজমেঢ়-সহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত মসজিদগুলির সমীক্ষা করাতে বদ্ধপরিকর। এসব মোটেও দেশের পক্ষে ভালো হচ্ছে না। আমি শুধু এটুকুই বলব, যে মুহূর্তে ভুল করা হবে, তারপর থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেই ভুলের খেসারত দিতে হবে। আর কত দিন এভাবে দেশ চলবে। আর কত দিন হিন্দু-মুসলিম, মন্দির-মসজিদ করা হবে!'