মহাকুম্ভ ঘিরে যে চরম অব্যবস্থা চোখে পড়েছে, যার জন্য মানুষকে প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে, এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছে! যা ঘোরতর অপরাধ! 'এই প্রেক্ষাপটে যদি কেউ এর সমালোচনা করেন, তাহলে আমার এ নিয়ে কী বলার থাকতে পারে?'
প্রতিবেদনের একেবারে শুরুতেই এই শব্দগুলি যাঁর বক্তব্য অনুসারে লেখা হয়েছে, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন উত্তরাখণ্ডের জ্য়োতিষ পীঠের বর্তমান শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী!
গতকালই (মঙ্গলবার - ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এবারের মহাকুম্ভের আয়োজনকে 'মৃত্যুকুম্ভ' বলে তুলনা করেছেন। কিন্তু, তিনি একবারের জন্যও মহাকুম্ভ বা কুম্ভস্নানের প্রতি কোনও অসম্মান প্রদর্শন করেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, যাঁরা এই বিপুল আয়োজন করেছেন, তাঁরা আদতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই আয়োজন নিয়ে যতটা প্রচার করা হয়েছে, ততটা কাজের কাজ করা হয়নি। যার খেসারত প্রাণ দিয়ে চোকাতে হয়েছে সাধারণ পুণ্যার্থীদের। আর, সেই কারণেই মহাকুম্ভকে 'মৃত্যুকুম্ভ' বলে উল্লেখ করে তাকে মৃত্যুকূপের সঙ্গে তুলনা করেছেন মমতা।
মমতার এই মন্তব্য নিয়ে শঙ্করাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে, তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে, সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া বক্তব্যে শঙ্করাচার্য জানান, তিনি কোনও রাজনৈতিক পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে চান না। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা যে মোটেও ভুল নয়, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষাতেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মহাকুম্ভের আয়োজকদের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, আপনি যত জনের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন, তত জনকেই নিমন্ত্রণ জানানো উচিত। আপনার খাওয়ানোর ক্ষমতা নেই, অথচ দলে দলে মানুষকে ডেকে বলছেন, এখানে ভাণ্ডারা খোলা হয়েছে। অথচ, মানুষ যখন সেখানে পৌঁছেছে, তখন না তো আপনার কাছে খাবার আছে, না তাঁদের বসতে দেওয়ার জায়গা আছে!
একেবারেই মমতার সুরে শঙ্করাচার্য বলেছেন, এবারের মহাকুম্ভ নিয়ে অযথা ঢাক পেটানো হয়েছে। এমনকী, যোগী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশাসনের আধিকারিকরা যদি ঠিক মতো ব্যবস্থাপনাই না করতে পারেন, তাহলে তাঁদের মোটা মাইনে দিয়ে সরকারি পদে বসিয়ে রাখা অর্থ কী?
মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীদের নোংরা, দূষিত, মলযুক্ত জলে স্নান করতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও আয়োজকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন শঙ্করাচার্য। বস্তুত, সরাসরি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কাঠগড়ায় তুলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অব্যবস্থার অভিযোগকেই সমর্থন করেছেন তিনি।