বাংলাদেশি হিন্দুদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ। বারাণসীতে বুধবারের এই সাক্ষাৎ পর্বে ওই বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। জানান, তাঁদের সমস্যার কথা অবশ্যই সরকারকে জানাবেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মোট ১২ জন বাংলাদেশি হিন্দু বুধবার সাক্ষাৎ করেন শঙ্করাচার্যের সঙ্গে। তাঁদের আবেদন ছিল, বাংলাদেশে যাতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার বন্ধ হয়, তা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপ করুক ভারত সরকার। এবং ভারত সরকারের কাছে তাঁদের এই দাবি পৌঁছে দিন শঙ্করাচার্য স্বয়ং।
বাংলাদেশি হিন্দুদের এই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন শঙ্করাচার্য। তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা যাতে নিজেদের দেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের কাছে বিষয়টি উত্থাপিত করবেন তিনি।
এদিকে, কিছু দিন আগেই বিশেষ কিছু হিন্দু নেতাকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি বলেছিলেন, সারা দেশেই রাম মন্দিরের মতো ইস্যু তৈরির করার চেষ্টা হচ্ছে। মন্দির-মসজিদ বিতর্কের জেরে দেশে অশান্তি ছড়াচ্ছে। যা কাম্য নয়। ভাগবতের অভিযোগ ছিল, কিছু হিন্দু নেতা এমনটা ঘটাচ্ছেন।
এ নিয়ে বুধবার শঙ্করাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোহন ভাগবত যা বলেছেন, সেটা আদতে একটি রাজনৈতিক মন্তব্য।
শঙ্করাচার্য বলেন, 'ভাগবত বলছেন, কিছু মানুষ এই ধরনের দাবি উত্থাপিত করছেন। কারণ, তাঁরা নেতা হতে চান। কিন্তু, আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই - সাধারণ হিন্দুরা কিন্তু নেতা হতে চান না। তিনি (ভাগবত) আসলে আম-হিন্দুদের মনোবাঞ্ছাই উপলব্ধি করে উঠতে পারেননি।'
তিনি আরও বলেন, 'যখন ভাগবত এবং তাঁর সহযোগীরা ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন তাঁরা রাম মন্দির নির্মাণ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। এখন ওঁরা ক্ষমতায় আছেন। তাই এইসব মন্তব্য অপ্রয়োজনীয়। মোহন ভাগবত সাধারণ হিন্দুদের যন্ত্রণা বোঝেন না!'
প্রসঙ্গত, এটা ঘটনা যে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে হঠাৎ করেই মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মারাত্মক হারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে বসে শঙ্করার্য বাংলাদেশি হিন্দুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেই উত্তরপ্রদেশেই এমন বহু ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
শতাব্দী প্রাচীন মসজিদগুলিতে পুজো করার দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন। সব ক্ষেত্রেই একই যুক্তি খাড়া করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে - কয়েকশো বছর বা তারও আগে সেই মসজিদের নীচে মন্দির ছিল। এমনকী, এই তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে ওই মসজিদগুলিতে সমীক্ষা চালানোর আবেদন করা হচ্ছে।
একাধিক ক্ষেত্রে আদালতগুলি সেই আবেদন মেনেও নিয়েছে। যা ঘিরে তুমুল অশান্তি ছড়িয়েছে। বারবার এমন ঘটনা ঘটায় এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে। অন্যদিকে, সম্প্রতি মোহন ভাগবতও এই ধরনের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তাঁর বার্তা ছিল, এই ধরনের আচরণ করলে ভারত আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে না। যা কখনই কাম্য নয়।