বর্তমানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে বাংলাদেশে। এই আবহে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ভারত থেকে 'ফেরত' চেয়েছে ইউনুসের সরকার। এরই মাঝে এক অনুষ্ঠানে যেন হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারের 'টাইমফ্রেম' দিলেন সেই দেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ঢাকায় গতকাল আসিফ বলেন, 'আশা করি, আগামী বিজয় দিবসের উদযাপন হবে গণহত্যাকারীদের শাস্তির রায়ে।' তাঁর কথায়, 'আওয়ামি লিগ সরকারের সময়কালে চারি বড় ধরনের মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল - জুলাই-অগস্ট হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড এবং ধারাবাহিক গুম ও হত্যা। এই চার ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর আবেদন করে দিল্লিকে 'নোট ভার্বাল' দিয়েছিল ইউনুসের সরকার। তবে সেই আবেদন নিয়ে সম্প্রতি আপত্তি জানিয়েছে আওয়ামি লিগ। ইউনুস সরকারের বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্দি প্রত্যর্পণের চুক্তি হয়েছিল, তাতেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশে। তবে আওয়ামি লিগের বক্তব্য, ২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল, 'ভুয়ো রাজনৈতিক কারণে করা মামলা' তার অধীনে আসে না। আওয়ামি লিগের অভিযোগ, হাসিনাকে খুনের ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশে ফেরাতে চাইছে ইউনুসের সরকার।
এই নিয়ে সম্প্রতি এক বিবৃতি প্রকাশ করে আওয়ামি লিগের তরফ থেকে বলা হয়, 'তারা বিচারের নামে সুকৌশলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ মনে করে যে, দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে কোনও তাৎপর্যই নেই এই তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যর্পণের অনুরোধের। কারণ রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। উপরন্তু, যদি ভুল বিচারের ঝুঁকি থাকে তবে এই চুক্তিটি প্রযোজ্য নয়। আজ সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশে আইনের শাসন বা বিচার নেই।'
উল্লেখ্য, প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকে কূটনৈতিক নোট পাঠানো হয়েছিল। তবে এই নিয়ে ভারত এখনও কিছু বলেনি সেভাবে। এদিকে এই ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছিলেন, 'কূটনৈতিক পত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও সরকারি চ্যানেলে আমরা কোনও উত্তর পাইনি। এই মুহূর্তে আমরা কোনও মন্তব্য করব না, বরং ভারতের সরকারের জবাবের জন্য অপেক্ষা করব। সেই জবাবের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে। যদি বন্দি বিনিময় চুক্তি দেখা যায়, তাহলে সেখানে কোনও সময়সীমার উল্লেখ নেই। তাই ভারতের উত্তর পাওয়ার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা একটা সময় পর্যন্ত বিষয়টি দেখব। যে কোনও ক্ষেত্রে জবাব দেওয়ার একটা স্বাভাবিক সময় আছে। সেই সময়ের মধ্যে জবাব না এলে আরও একটা তাগিদপত্র দেওয়া হবে। তবে এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এখনই বলা মুশকিল হবে।' অর্থাৎ, প্রশাসনিক আমলা বুঝিয়ে দেন, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা যতই হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে হম্বিতম্বি করুক, এই ইস্যুতে আদতে তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে কিছু করণীয় নেই।