ভারত সফরে আসার প্রাক্কালে ১৯৭৫ সালের ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সংস্থা এএনআ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাঁচ দশক আগে তাঁর বাবা মুজিবুর রহমানকে হত্যার যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। কীভাবে হত্যাকারীরদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁকে নাম পরিবর্তন করে এক সময় দিল্লিতে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল সে কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এক সময় দিল্লির পশ পান্ডারা রোডে নাম পরিবর্তন করে আত্মগোপন করতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। সে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় চোখ ভিজে যায় হাসিনার। তিনি জানান, ১৯৭৫ সালে তাঁর পরমাণু বিজ্ঞানের স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই দিনটি ছিল ৩০ জুলাই। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন তার বাবা, মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। কিন্তু এটাই যে শেষ দেখা ছিল তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে ছিল। তাই আমি বাবা মায়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকতাম। আমার বাবা-মা, আমার তিন ভাই এবং দুই বোন সবাই বাড়িতে থাকতাম। তাই তারা সকলেই আমাকে বিমানবন্দরে ছাড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা শেষ দেখা ছিল।’ এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম অন্ধকার অধ্যায় বলে তিনি বর্ণনা করেন।
তিনি জানান, তার ১৫ দিনের পর তিনি জানতে পারেন তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। সেই কথা তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি জানান, তার পরিবার-পরিজনদের মিলিয়ে সেই সময় ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী হাসিনাকে নিরাপত্তা এবং আশ্রয় দিয়েছিলেন। পাঁচ দশক পর এখনও সেই ভয়ংকর সেই বেদানাদায়ক স্মৃতির কথা ভুলতে পারেননি হাসিনা। নাম পরিবর্তন করে প্রায় ছয় বছর ধরে তিনি দিল্লিতে ছিলেন বলে জানান। সেই সময়টা যে তার পক্ষে যে কতটা কঠিন ছিল সে কথাই সংবাদ সংস্থার সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
এতকিছু হারানোর পরেও তিনি ভেঙে পড়েননি। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমি ভেবেছিলেন আমাদের কিছু করতে। হবে এভাবে বেঁচে থাকা যায় না।’ মুজিবুর রহমানকে হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই অপরাধ শুধু আমার বাবাকে হত্যা করার অপরাধ ছিল না, এটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেই বদলে দিয়েছিল।’ তিনি জানান, ‘আমি দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবেনি।’ শুধু তাই নয়, তাঁর বাবার হত্যাকারীরা তাঁকেও তারা বহুবার খুন করার চেষ্টা করেছে বলে জানান হাসিনা।