বাংলাদেশে '৩৬ জুলাই'-র পাঁচ মাস পরে লন্ডনে এল '৩৭ জুলাই'। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্ধ হয়ে ব্রিটেনের দুর্নীতি-বিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক ইস্তফা দেওয়ার পরই এমন মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, 'এটা লন্ডনে ৩৭ জুলাই।' আসলে ‘৩৬ জুলাই’ বলতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনকে বোঝানো হয়। গত বছরের জুলাইয়ে লাগাতার আন্দোলনের পরে ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান হাসিনা। সেই রেশ ধরেই ৫ অগস্টকে ‘৩৬ জুলাই’ (জুলাইয়ের ৩১ দিন এবং অগস্টের ৫ দিন) হিসেবে অভিহিত করে থাকেন বাংলাদেশিদের একাংশ। আর এবার হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্ধ হয়ে টিউলিপ ইস্তফা দিতেই সেই দিনটাকে ‘৩৬ জুলাই’-র তকমা দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রধান সচিব।
দরজা খোলা থাকবে, টিউলিপকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
যদিও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি টিউলিপের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করলেও হাসিনার বোনঝির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনও প্রমাণ মেলেনি। মন্ত্রিত্বের কোনও নিয়মও ভঙ্গ করেননি। সেই পরিস্থিতিতে টিউলিপের জন্য চিরকাল 'দরজা' খোলা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী।
কোনও আর্থিক অসঙ্গতি মেলেনি, টিউলিপকে ‘ক্লিনচিট’
টিউলিপের ইস্তফার পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তাতে স্টারমার বলেন, 'তোমার ইস্তফাপত্র গ্রহণের পাশাপাশি আমি একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই যে স্বাধীন উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস আমায় আশ্বস্ত করেছেন যে তোমার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি লঙ্ঘন এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনও প্রমাণ পাননি। (তারপরও) ব্রিটেনকে পরিবর্তন করার যে প্রতিজ্ঞা আমরা করেছিলাম, সেটা থেকে যাতে নজর না ঘুরে যায়, তা নিশ্চিত করতে তুমি যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছো, তার প্রশংসা করছি।'
আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, মত উপদেষ্টার
তবে একটা ক্ষেত্রে টিউলিপ ভুল করেছিলেন বলে দাবি করেছেন স্বাধীন উপদেষ্টা ম্যাগনাস। টিউলিপের ইস্তফার মধ্যেই স্টারমারকে পাঠানো স্বাধীন উপদেষ্টার যে চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে, কোনও নিয়ম লঙ্ঘন না করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে টিউলিপের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তাঁর নাম খারাপ হওয়ার যে ঝুঁকি ছিল, সে বিষয়ে সতর্ক হননি হাসিনার বোনঝি। আর যে ফ্ল্যাট নিয়ে এত বিতর্ক হয়েছে, সেটির উৎসের বিষয়ে টিউলিপের কোনও ধারণা ছিল না বলেও দাবি করেছেন স্বাধীন উপদেষ্টা।
টিউলিপের বাড়ি বিতর্ক!
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ভূমি রেজিস্ট্রির তথ্যে উঠে এসেছে যে উত্তর লন্ডনের একটি বাড়িতে থাকতেন টিউলিপ। যা ২০০৯ সালে তাঁর পরিবারকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি আইনজীবী মইন ঘানি। যিনি হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতেন। আবার চলতি মাসেই ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন দাবি করা হয় যে কোনও টাকা না দিয়েই হাসিনার দল আওয়ামি লিগের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর থেকে ২০০৪ সালে লন্ডনে একটি আলাদা বাড়ি নিয়েছিলেন টিউলিপ।
অন্যদিকে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের আমলে একটি দুর্নীতি মামলায় টিউলিপের নাম জড়িয়ে যায়। যে মামলায় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে বাংলাদেশের ন'টি উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে প্রায় ৮০,০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সেই মামলায় হাসিনা, টিউলিপদের নাম জড়িয়েছে। যদিও কোনওরকম দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বোনঝি।