একাধিক বন্দুক ব্যবহার করে অমানবিকতার খেল খেলেছেন 'নিষ্ঠুর' এক ব্যক্তি। আমেরিকার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা তিনি। এক এক করে ৮১টি অবলা প্রাণীর প্রাণ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ছোট শহর প্রুনডেলেতে ঘটেছে মর্মান্তিক ঘটনাটি। জানা গিয়েছে, এক গৃহস্থ বাড়ির পোষ্যদের, তিন ঘন্টা ধরে গুলি করে মেরেছেন ওই অভিযুক্ত। এই সপ্তাহের শুরুতেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৃশংস এই ব্যক্তির নাম ভিসেন্টে অ্যারোয়ো। বয়স ৩৯ বছর। অবলাদের হত্যাকাণ্ডে, আইনের হাত থেকে নিস্তার পাননি অ্যারোয়ো। যদিও তাঁর তাতেও কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। প্রথমবারের মতো অ্যারোয়োকে আদালতে তোলা হলে, তাঁর দাবি যে তিনি নাকি নির্দোষ। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বলেছেন, তিনি পশু নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগের জন্যই দোষী নন।
আরও পড়ুন: (তিনজন সিআরপিএফ জওয়ান–সহ পাঁচজনের মৃত্যু, ছত্তিশগড়ে বজ্রপাতে বাড়ছে সংখ্যা)
কিন্তু আদালতের কাগজপত্র বলছে অন্য কথা। বলা হয়েছে যে অ্যারোয়োর বিরুদ্ধে ১৪টি ছাগল, ৯টি মুরগি, ৭টি হাঁস, ৫টি খরগোশ, একটি গিনিপিগ এবং ৩৩টি প্যারাকিট ও ককাটিয়েল পাখি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি লাকি, এস্ট্রেলা এবং প্রিন্সেসা নামের তিনি ছোট প্রজাতির ঘোড়াকেও গুলি করেছেন তিনি। কিছু প্রাণী আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে
গত মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। ৩:২৫ টার দিকে কল আসে কর্তৃপক্ষের কাছে। সেলিনাস থেকে প্রায় ৮ মাইল দূরে প্রুনডেল থেকে এসেছিল ফোনটি। ফোনের বিপরীতেই ভেসে আসছিল গুলির শব্দ। ডেপুটিরা তখন সবাইকে বাড়ির ভিতরে থাকার নির্দেশ দেন। এরপর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন মন্টেরি কাউন্টি অফিসাররা। কোনও ঝামেলা ছাড়াই গ্রেফতার হন অ্যারোয়ো। ঘটনাস্থলে, উদ্ধার হয় রাইফেল, শটগান এবং হ্যান্ডগান সহ আটটি আগ্নেয়াস্ত্র। অ্যারোয়োর থাকার জায়গায় তল্লাশি চালাতে বেরিয়ে আসে, অবৈধ একে-৪৭, দু' টি ঘোস্ট বন্দুক এবং প্রায় ২,০০ রাউন্ড গোলাবারুদ সহ আরও সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র। সব খতিয়ে দেখে, অ্যারোয়োর বিরুদ্ধে, অবলা প্রাণীর উপর নিষ্ঠুরতা, আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার, ভাঙচুর, মাদকের ব্যবহার, এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মন্টেরি কাউন্টি শেরিফ কমান্ডার আন্দ্রেস রোসাসের, শুক্রবার বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে খুবই মর্মাহত হয়ে পড়েছিলাম। তাঁর দাবি, ছোট আকৃতির ঘোড়াগুলির মধ্যে একটি ছিল জমির মালিকের। বাকি ৮০টি পশু-পাখির মালিক অন্য কেউ। প্রুনডেলের জমিটি ভাড়া করে ওই প্রাণীদের পুষেছিলেন তিনি। কিন্তু এমন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে, এতগুলো প্রাণীহত্যার সত্ত্বেও, মৃত পোষ্যদের মালিকরা অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করতে বা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাননি। রোসাস আরও বলেছিলেন যে অ্যারোয়ো ওই জমির আশেপাশেই থাকতেন। তাঁর এমন মর্মান্তিক কাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি।
অ্যারোয়োর আইনজীবী, উইলিয়াম পারনিক, অ্যারোয়োর এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁর মক্কেলের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ কথা আদালতকেও জানিয়েছেন। পারনিক আরও বলেছেন যে অ্যারোয়োর পরিবার তাঁকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। সবটা শুনে বিচারক অ্যারোয়োর মানসিক চিকিৎসা করানোর আদেশ দিয়েছেন, তাঁকে ১ মিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে।