একটা সময় ছিল, যখন তাঁকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি কোনও কাজই করতেন না। আর এখন সেই তিনিই কিনা লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছেন। তাও কিছু না করার জন্য!
যাঁর কথা বলছি, তিনি জাপানের মানুষ। ৪১ বছরের শোজি মোরিমোতো। যদিও সোশাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে তিনি অনেক বেশি জনপ্রিয় জাপানের 'ডু নাথিং গাই' (কিছু না করা ব্যক্তি) পরিচয়ে!
আন্তর্জাতিক মহলের দাবি অনুসারে, মোরিমোতো এখন নিজেকে ভাড়া দেন! সেইসব মানুষের কাছে, যাঁরা শুধুমাত্র সঙ্গী চান সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু, সেই সময় কাটানোয় কোনও রোম্যান্স থাকা চলবে না। এমন একাকী সঙ্গী খোঁজা মানুষরাই নাকি মোরিমোতোকে সঙ্গী হিসাবে ভাড়া নিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করেন।
যদি এতটুকু পড়েই মনে হয়, এ আবার কেমন আজব পেশা, তাহলে বলব, এই পেশা যে কতটা আজব, তা বুঝতে গেলে আরও একটু খবরাখবর নিতে হবে!
কারণ, মোরিমোতোকে নানাভাবে ভাড়া নেওয়া যায়। যেমন - তিনি ভিডিয়ো কলে কাউকে সঙ্গ দিতে পারেন। উলটোদিকে, যিনি মোরিমোতোকে ভাড়া করেছেন, তখনই হয়তো তিনি তাঁর নিজের ঘর পরিষ্কার করছেন। মোরিমোতোর কাজ হল, সেই সময়টুকু তাঁকে ভার্চুয়ালি সঙ্গ দেওয়া!
আবার ধরুন, কোথাও কোনও লম্বা ম্যারাথন চলছে। একজন দর্শক দাঁড়িয়ে রয়েছেন ফিনিশ লাইনের কাছে। সেখানে খেলোয়াড়দের পৌঁছতে সময় লাগবে। সেটা বোরিং। তাই, সেই অপেক্ষারত দর্শকটিকে সঙ্গ দিতেও টাকার বিনিময়ে সেখানে পৌঁছে যেতে পারেন মোজিমোতো!
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোরিমোতো দাবি করেন, একবার এক মহিলা তাঁকে ভাড়া করে জানান, বন্ধুর সঙ্গে একটি কনসার্টে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, তিনি যেতে পারবেন না। তাই, মোরিমোতোকে সেখানে পাঠান তিনি।
মোরিমোতো জাপানে এতটাই জনপ্রিয় যে প্রতিবছর অন্তত ১,০০০টি সঙ্গ দেওয়ার অনুরোধ পান তিনি! এবং শুধুমাত্র সঙ্গ দিয়েই রোজগার করেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সূত্রের দাবি, প্রথম-প্রথম দুই থেকে তিনঘণ্টা সঙ্গ দেওয়ার জন্য ৫,৪০০ থেকে ১৬,২০০ টাকা (ভারতীয় মুদ্রায়) ভাড়া নিতেন তিনি। কিন্তু, পরবর্তীতে এক অনন্য মডেল আমদানি করেন মোরিমোতো। সেটা হল - 'যেমন ইচ্ছা টাকা দাও'! অর্থাৎ, যিনি মোরিমোতোকে ভাড়া নেবেন, তিনি তাঁর ইচ্ছা মতোই তাঁকে টাকা দেবেন।
এই প্রসঙ্গে মোরিমোতো বলেন, 'আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে টাকা নিই। তাই, আমি জানি না, এটা কত দিন কাজ করবে। তবে, আমি বিষয়টা উপভোগ করছি। এবং আমি চাই, এটা এভাবেই চলুক।' তিনি বলেন, 'আমি শুধু খুব সাধারণভাবে বাঁচতে চাই এবং জীবনকে উপভোগ করতে চাই।'
মোরিমোতো তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে জানান, একবার এক মহিলা আমাকে ভাড়া করেছিলেন। আমার কাজ ছিল, একটি ক্যাফের একেবারে কোনার টেবিলে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকা। যাতে তিনি আমারে দেখতে পান। সেদিন সেখানে মহিলা তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলতে গিয়েছিলেন!
মোরিমোতো আরও বলেন, তাঁর এই কাজে অনেক মজা আর রোমাঞ্চ আছে। যেমন - 'আমি একটি অফার মেসেজ পাই, তখন। যখন আমি অচেনা জায়গায় কোনও অচেনা লোকের সঙ্গে দেখা করি, তখন। কিংবা যখন আমাকে শুধুই একটা গল্প শুনতে হয়, তখন। আমি সেই প্রত্যেকটা মুহূর্তে আনন্দ অনুভব করি। আমি শুধুই এটা করতে চাই। আর কিছু না।'