যিশুর পুনরুজ্জীবন উৎসব হিসেবে ইস্টার পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। ইস্টারের দিনে চকোলেট ডিম এবং বানি বা খরগোশ উপহারে দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু ইস্টার উপলক্ষে এমন অনেক প্রথাই রয়েছে, যার উল্লেখ বাইবেলে পাওয়া যায় না, যেমন ইস্টার বানি অর্থাৎ ইস্টার খরগোশ ও ইস্টার এগ। ঠিক এভাবেই ইস্টার ক্যান্ডির প্রচলনও আধুনিক যুগেরই অবদান।
ইস্টার বানি বা খরগোশ- বাইবেলে লম্বা কান, ছোট লেজ বিশিষ্ট এমন কোনও প্রাণীর উল্লেখ নেই, যে ইস্টার সানডের দিনে বাচ্চাদের কারুকার্য করা ডিম উপহারে দিয়ে বেড়াবে। তা সত্ত্বেও এই ইস্টার বানি খ্রিষ্টান ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এর উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। তবে এই খরগোশকে প্রাচীন কাল থেকে উর্বরতা ও নবজীবনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে আসছে।
মনে করা হয়, ১৭০০ সালে জার্মান অভিবাসীদের হাত ধরে আমেরিকায় পা রাখে ইস্টার বানির প্রথা। ‘অস্টারহেস’ নামক নিজস্ব প্রথাটিকে জার্মানরা পেনসিলভেনিয়ায় থাকাকালীন পালন করতেন। সেখানে জার্মান বাচ্চারা খরগোশের নেস্ট বা বাসা বানিয়ে তাতে রাখা হত নানান রঙের ডিম। মনে করা হত খরগোশেরা ওই নেস্টে ডিম পেড়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এই প্রথা।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, কাল্পনিক খরগোশটি ইস্টারের সকালে সকলকে উপহার দিয়ে বেড়ায়। উপহারে থাকত, নকশা করা চকোলেট, নানা ধরনের ক্যান্ডি। আবার উপহার বিলি করতে থাকা ওই কাল্পনিক খরগোশের ক্লান্তি ও ক্ষিদে মেটানোর জন্য খুদেদের দ্বারা গাজর রাখা প্রথাও প্রচলিত ছিল।
ইস্টার এগ- ইস্টার ধর্মীয় ছুটির দিন হলেও, এর কিছু প্রথা, বিশেষত ইস্টার এগ আবার পাগান প্রথার সঙ্গে জড়িত। ডিমকে নবজীবনের প্রাচীন প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। মনে করা হয়, ইস্টার এগ যিশুর পুনরুজ্জীবনকে তুলে ধরে। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইস্টারের জন্য নকশা করা ডিমের প্রথা শুরু হয়। খ্রিষ্টধর্মের লেন্টের মাসে ডিম খাওয়া নিষিদ্ধ। তাই সকলে এই ডিমে কারুকার্য করার মাধ্যমে উপবাস ও অনুতাপের সময়কাল লেন্টের সমাপ্তি ঘোষণা করে। তার পর ইস্টারের দিনে এই ডিম খাওয়া হয়। ইস্টারের দিনে এগ হান্ট ও এগ রোলিং অন্যতম প্রথা যার কোনও ধর্মীয় ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়না। ইস্টারের দিনে আবার চকোলেট এগ উপহারে দেওয়া হয়। এই চকোলেট এগের মধ্যে ছোট ছোট ডিমের আকারের ক্যান্ডিও ভরা থাকে। পাশাপাশি ডিম্বাকৃতি বাক্সের মধ্যে জেলি বিন ভরেও উপহারে দেওয়া হয়ে থাকে।
ইস্টার লিলি- খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে সাদা লিলি যিশুর পবিত্রতার প্রতীক। ইস্টারের সময় চার্চ ও বাড়ি সাদা লিলি দিয়ে সাজানো হয়। ভূতল ফুড়ে উৎপত্তি হয় এই ফুলের, তাই একে পুনর্জন্ম ও যিশুর পুনরুজ্জীবনের আশার প্রতীক বলে মনে করা হয়। জাপান থেকে প্রথমে ব্রিটেনে আসে এই ফুলটি। তার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে লিলি। ক্রমশই এটি ইস্টার পালনের অনাধিকারিক ফুল হিসেবে গুরুত্ব অর্জন করে।