কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। তবে শুধু বাংলা নয় 'নানা জাতি, নানা মত, নানা পরিধান' এর দেশ ভারতের গোটা ছবিটাই আসলে এক। উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় উত্সব লোহরি। ব্যাপক উত্সাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে উত্তর ভারতের মানুষজন পালন করে থাকেন লোহরি। মূলত কৃষক সম্প্রদায়ের উত্সব হিসাবেই ধরা হয় লোরিকে। মকর সংক্রান্তির একরাত আগে লোহরি পালন করা হয়।
পঞ্জিকা মতে পৌষমাসে লোহরি পালন করা হয়। মূলত ১৩ জানুয়ারির আশেপাশেই লোহরি সেলিব্রেট করা হয়ে থাকে। এই সময় সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। এই উত্সব শীতের শেষ এবং নতুন ফলসের মরসুমেরও বার্তা বয়ে আনে। সূর্য,পৃথিবী, অগ্নি এবং চাষের জমির উপসনা করা হয় এই উত্সবে। ভালো ফসল, সুস্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির প্রার্থনা করা হয়।
পঞ্জাবের প্রধান ফসল গমের চাষ শুরু হয় অক্টোবর মাসে এবং ফসল পাকে জানুয়ারি মাসে, লোহরির সময়। পৌষ সংক্রান্তির ঠিক আগে লোরি পালন করার কারণ হল সূর্যদেব এই সময় ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। যা শুভারম্ভের লক্ষ্মণ হিসাবে ধরা হয়।
এই সময় ভগবানের উদ্দেশে নলেন গুড়ের তৈরির নানা রকম সুস্বাদু মিষ্টি অর্পন করা হয়। ‘গুড় কি রেওয়ারি’, 'তিল কি চিক্কি' এবং ‘মাখনা’ ছাড়া লোরি অসম্পূর্ণ। মূলত গুড় আর বাদাম দিয়ে তৈরি মিষ্টি এগুলি। আগুন জ্বেলে তাঁর চারপাশে নেচে-গেয়ে লোরির আনন্দ ভাগ করে নেন মানুষজন। অগ্নিদেবকে তুষ্ট করতেই এই কাজ করা হয়।
পঞ্জাবে ঢোল এবং ‘সুন্দর মুনদ্রিয়া’ গান ছাড়াও লোহরির সেলিব্রেশনকে অসম্পূর্ণ হিসাবে মানা হয়। পঞ্জাবি লোকগাথা অনুসারে ‘সুন্দর মুনদ্রিয়া’ গানটি লোরির উত্সবে বিশেষ অর্থবহ। কারণ এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুল্লা ভাট্টির নাম।
কথিত আছে মুঘল সম্রাট আকবরের সমসাময়িক দুল্লা ভাট্টি, যিনি পিন্ডি ভট্টিয়ানের আবদুল্লা হিসাবেও পরিচিত। তাঁকে পঞ্জাবের রবিনহুড হিসাবে ধরা হয়।
লোকগথা অনুসারে ধনী মানুষজনের থেকে অর্থলুট করে তিনি গরীবদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতেন। ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি হয়ে যাওয়া অনেক মেয়েকে তিনি উদ্ধার করেছেন। তেমনই দুজন পঞ্জাবি কন্যা সুন্দরি এবং মুন্দরিকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন দুল্লা ভাট্টি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁর স্মরণেই লোহরিতে গাওয়া হয়ে আসছে এই গান।