তন্ময় চট্টোপাধ্য়ায়
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা শুভেন্দু অধিকারীর শিখ সম্প্রদায়ের এক আইপিএস অফিসারকে উদ্দেশ্য করে খলিস্তানি মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। আর তার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার রাতে মধ্য কলকাতার মুরলীধর এন লেনে বঙ্গ বিজেপির সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন৷ শুভেন্দু অধিকারী আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংকে খলিস্তানি বলে কটাক্ষ করেছিলেন বলে অভিযোগ।
সন্দেশখালি-২ ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের তিন নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ ওঠে। গ্রামের মহিলাদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। তবে ইতিমধ্যেই পুলিশ দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওই আইপিএস সেদিনই বলেছিলেন,, 'আমি পাগড়ি পরেছি বলে আপনারা আমাকে খালিস্তানি বলছেন? একজন পুলিশ সদস্য পাগড়ি পরে দায়িত্ব পালন করলে তিনি খালিস্তানি হয়ে যান? গোয়েন্দা শাখার স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট সেদিন এভাবেই গর্জে উঠেছিলেন।
আমি আপনার ধর্ম সম্পর্কে কিছু বলছি না। আমার সম্পর্কেও কিছু বলতে পারবেন না। আপনার ধর্ম নিয়ে কেউ কি কিছু বলেছে? তাহলে আপনি এটা করছেন কেন? বিজেপি নেতাদের এ কথা বলেছিলেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারীকে ওই অফিসারকে বলতে শোনা যায়, মন্তব্য আপনার বিরুদ্ধে ছিল না।
যদিও ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে বাংলার ৯১.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার মাত্র .০৭% শিখ, কলকাতা এবং আসানসোলের মতো কয়েকটি প্রধান জেলা শহরে ব্যবসা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে এই সম্প্রদায়ের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। দুর্গাপুর, খড়গপুর ও শিলিগুড়িতেও থাকেন তাঁরা।
মঙ্গলবারের ঘটনাটি বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করার পর থেকে কিছু ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বুধবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই এই ঘটনার নিন্দা করেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে মান এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিজেপি সম্ভবত জানে না ভারতের স্বাধীনতা অর্জন ও সংরক্ষণের জন্য পাঞ্জাবিরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছে। বিজেপির উচিত পাঞ্জাবিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ২০১৬ ব্যাচের আইপিএস অফিসারের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন, যিনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ লঙ্ঘন করা হয়নি তা নিশ্চিত করার জন্য সিংকে মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে বিজেপি নেতাদের ওই এলাকায় ঢুকতে বাধা দিয়েছিল প্রশাসন।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে তাঁর চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পরে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই দক্ষিণবঙ্গ পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল সুপ্রতিম সরকার বলেছিলেন, বিরোধী দলনেতা আঙুল তুলে সরাসরি সিংকে খালিস্তানি বলে অভিযুক্ত করেছেন। যা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেব। এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বুধবার বাংলার ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার সন্দেশখালি পরিদর্শন করলেও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের হয়েছে কিনা তা সন্ধ্যা পর্যন্ত জানাননি।
বঙ্গ বিজেপির তরফে অবশ্য এই বিতর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
' ওই কর্মকর্তা রূঢ় আচরণ করেন। আমি মনে করি না যে আমি বা আমার সহকর্মীরা কোনও ব্যক্তিগত মন্তব্য করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সস্তা রাজনীতি করেন আর এই অফিসার তাঁর নম্বর বাড়াতে চান। শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা কোনও সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে কিছু বলিনি।