তিনি প্রাক্তন খেলোয়াড়। অন্যদের তুলনায় ঢের বেশি ফিট। শরীরচর্চা করেন। তারপরও মাত্র ৪৮ বছরে মুুদৃ হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যে ধরনের হৃদরোগ চিকিৎসকদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
কিন্তু কেন? চিকিৎসকদের বক্তব্য, আচমকাই দুর্বল হয়ে পড়ে না হৃদপিণ্ড। আগেভাগেই একাধিক সংকেত মিলতে থাকে। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপের মধ্যে সেই বিপদ সংকেতকে বোঝা যায় না। অথবা বোঝা গেলেও খুব একটা ভ্রূক্ষেপ করা হয় না। কিন্তু ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ বা 'নিঃশব্দ' হৃদরোগের ক্ষেত্রে উপসর্গ অত্যন্ত কম হয়। অর্থাৎ বুকে ব্যথা; প্রবল বুকে ব্যথা; ঘাড়, চোয়াল বা হাতে মারাত্মক যন্ত্রণা, আচমকা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা, দরদর করে ঘামতে থাকা, মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো সাধারত হৃদরোগের মতো উপসর্গ তেমন প্রবল হয় না। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, হৃদরোগের ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই থাবা বসাচ্ছে ‘সাইলেন্ট’ বা 'নিঃশব্দ' ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’। যা মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের উপর বেশি প্রভাবশালী।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’-এর উপসর্গ এতটাই কম হতে পারে যে অনেকেই তাতে পাত্তা দেন না। রোজকার কোনও অস্বস্তি বা কম কোনও গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যা বলে এড়িয়ে যান অনেকে। ক্লান্তি বা শারীরিক অস্বস্তি হলে তা রোজকার কাজের চাপ, কম ঘুম বা অন্যান্য ব্যথা বলে অবহেলা করে থাকেন পুরুষরা। গলা এবং বুকে চিনচিনে ব্যথার মতো হৃদরোগের উপসর্গ বুঝতেও ভুল করেন।
শুধু তাই নয়, চিরাচরিত হৃদরোগের ক্ষেত্রে বুকের যেখানে ব্যথা হয়, 'নিঃশব্দ' ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’-এর ক্ষেত্রে ঠিক সেখানে হয় না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুকের বাঁ-দিকে প্রবল ব্যথা না হয়ে মাঝামাঝি জায়গায় অস্বস্তি হতে পারে। হালকা ব্যথা হতে পারে। এমনকী অনেক সময় একেবারে স্বাভাবিকও মনে হয়। যা সংকেত বুঝতে না পারার সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি করে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ধরুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন আপনি। কিন্তু তা ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না। যতক্ষণে বোঝা যাবে, ততক্ষণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাবে। কারণ আপনার অজ্ঞাতেই ভিতরে ভিতরে হৃদপিণ্ডে রক্তের প্রবাহ কমতে থাকে। তাতেই বাধে বিপত্তি। সংশ্লিষ্ট পুরুষ বা মহিলা সেই বিষয়ে টের না পাওয়ার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এমনকী তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
'নিঃশব্দ' হৃদরোগের সম্ভাব্য উপসর্গ :
১) বুকের মধ্যিখানে অস্বস্তি। যা কয়েক মিনিট ধরে থাকে। বা থেমে যায় এবং আবারও শুরু হয়।
২) দুই হাত, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেটের মতো শরীরে উপরের অংশে অস্বস্তি।
৩) বুকে অস্বস্তির আগে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা বা বুকে অস্বস্তির সময় শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা।
৪) বমি বমি ভাব হওয়া বা দরদর করে ঘামতে থাকা।