নেই কোনও হ্যাশট্যাগের বন্যা। নেই কোনও বড় উদ্যোগ। এখনও নিঃশব্দে জ্বলছে সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান।
জোর কদমে চলছে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, বলছেন ওড়িষ্যার বন দফতরের আধিকারিকরা। কিন্তু, নাসা-র উপগ্রহ চিত্র বলছে অন্য কথা। সেই ছবি অনুযায়ী সিমলিপালের প্রায় ১০০টি স্থানে আগুনের লেলিহান শিখা। ছড়িয়ে রয়েছে ৫,৫৬৯ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল জঙ্গল জুড়ে।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছিলেন বন বিভাগের কর্তারা। 'জাতীয় উদ্যানের কেবল বাইরের সীমানার দিকে জায়গাগুলোয় আগুন লেগেছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো একটানা জ্বলা দাবানল নয়। এখনও পর্যন্ত বন্যপ্রাণ হারানোর কোনও খবর মেলেনি,' জানান এম যোগজয়ানন্দ, চিফ কনজারভেটর অফ ফররেস্ট, বারিপদা।
যদিও তাঁর এই বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন সিমলিপালে কর্মরত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকলেই। তাঁদের দাবি, 'এখনও সব জায়গা দেখেইনি বন দফতর। ঠাকুরমুন্ডা ও পোদাদিহা রেঞ্জ-এ কেউ প্রবেশই করেনি।'
বন্যপ্রাণের মৃত্যু না হওয়ার দাবিতেও ক্ষুদ্ধ পশুপ্রেমীরা। স্থানীয় সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ভানুমীত আচার্য এ বিষয়ে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। 'একাধিক প্যাঙ্গোলিন, ফরেস্ট ফাউল, পি ফাউল ও অন্যান্য বন্যপ্রাণের মৃত্যু নিশ্চিত। এতটা বড় এলাকা না দেখে, আগুন না নিভিয়ে কী করে আগে থেকে আশ্বাস দিচ্ছে বন দফতর?' প্রশ্ন তাঁর। আগুনের পেছনে বন দফতরের গা ছাড়া ভাবকেও দায়ী করছেন অনেকে।
ওড়িষ্যায় অবশ্য বছরের এই সময়ে জঙ্গলে আগুন লাগাটা নতুন নয়। সিমলিপালে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্ শাল বন। এছাড়া রয়েছে অজস্র পর্ণমোচী বৃক্ষ। জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় থাকা মানুষদের থেকে বা অন্য কোনওভাবে আগুন লাগে প্রায় প্রতি বছরই। তবে, এ বছরের আগুন অন্যান্য বছরগুলির তুলনায় অনেক বেশি। বৃষ্টিই এখন পরিস্থিতিকে রক্ষা করতে পারে বলে মনে করছে বন দফতর।
'ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণে আগুন লাগার খবর এসেছে। কিন্তু তার সবক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তত্পর হওয়া যায়নি। মাত্র ৬০% ক্ষেত্রেই স্থানে পৌছনো হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে,' ডিভিশনাল বন আধিকারিকদের পাঠানো চিঠিতে এমনই উল্লেখ করেছেন রাজ্যের বনদফতরের বিশেষ সচিব লিঙ্গরাজ ওটা।
সিমলিপালে ৯৩টি প্রজাতির অর্কিড, ৩০০ প্রজাতির ঔষধি গাছ, ৫২টি বিরল প্রজাতির গাছের দেখা মেলে। এটি দেশের বৃহত্তম শাল বনও বটে। তাছাড়া এই বনে বাস ৪২ ধরণের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীর, ২৬৪ প্রজাতির পাখি, ৩৯টি প্রজাতির সরীসৃপ ও ১২টি প্রজাতির উভচর প্রাণীর।
প্রায় ১২ বছর আগে ২০০৯ সালে সিমলিপালকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসাবে ঘোষণা করে UNESCO। ভারতে মোট ১২টি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের স্বীকৃতি দিয়েছে UNESCO। সুন্দরবনকে ২০০১ সালে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ-এর আওতায় আনা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে UNESCO একটি Man and Biosphere (MAB) নামক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। MAB পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে UNESCO ১৯৭১ সালে প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve) চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে।
UNESCO-র সংজ্ঞা অনুযায়ী স্থলজ, জলজ ও সামুদ্রিক ক্ষেত্র মিলিয়ে বাস্তুতন্ত্রে একটি সুবিশাল ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী মানুষও তার অংশ হয়।