৭২ বছর বয়সে প্রয়াত সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। দীর্ঘদিন বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মমতা থেকে রাহুল গান্ধী সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন অনেকেই।
রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, সীতারাম ইয়েচুরি আমার বন্ধু ছিলেন। তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হত। সেটা খুব মিস করব।
জাতীয় রাজনীতির সঙ্গেই বাংলার রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলা থেকেই নির্বাচিত হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। আর বাংলার ভোট মানেই যে বক্তার নাম প্রায় সর্বত্র থাকত তিনি আর কেউ নন , ইয়েচুরি। বাংলা যেন দ্বিতীয় বাড়ি।
১৯৫২ সালের ১২ অগস্ট জন্মেছিলেন চেন্নাইতে। আসল বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদে। দিল্লিতে পড়াশোনা। তবে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর টান ছিল যথেষ্ট। ভালোই বলতেন বাংলাটা। বাংলার নেতাদের সঙ্গে কিংবা বাংলার সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাতেই কথাবার্তা বলতেন জেএনইউর প্রাক্তনী সীতারাম ইয়েচুরি।
২৫দিনের লড়াই। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি এইমসে। সেই লড়াই থামল বৃহস্পতিবার। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় লিখেছেন জাতীয় রাজনীতিতে একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
তবে শুধু জাতীয় রাজনীতিতে নয়, বাংলার বাম রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এমনটাই মনে করছেন বঙ্গ সিপিএম নেতৃত্ব। বাংলার বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল সীতারাম ইয়েচুরির নাম। বার বার তিনি ছুটে আসতেন বাংলায়।
গত ৮ অগস্ট প্রয়াত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর ওইদিনই ছানির অপারেশন হয়েছিল ইয়েচুরির। দিল্লিতে ছিলেন তিনি। পরের দিন বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রায় অংশ নিতে পারেননি ইয়েচুরি। ২২ অগস্ট ছিল বুদ্ধবাবুর স্মরণসভা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেদিনও আসতে পারেননি ইয়েচুরি। ভর্তি হয়েছিলেন এইমসে।
দুটো টার্মে বাংলা থেকেই রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। সেই ১৯৯২ সাল থেকে তিনি ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য। ২০১৫ সালে তিনি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছিলেন। এবার লোকসভা ভোটের আগে ইন্ডিয়া জোটে মোদী বিরোধী শক্তিকে একজোট করতে তিনি বার বার অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ইন্ডিয়া জোটকে সফল করতে রাত দিন খেটে চলেছেন সীতারাম। তিনি সেই সময় বলেছিলেন, ইন্ডিয়াতে আরও পার্টি যোগ দেবে। রাজ্যস্তরে আসন সমঝোতা হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। এটা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতীয় সংবিধান আমাদের সকলের জন্য় সমান অধিকার দিয়েছে। অনেক ঘটনা হয়ে গিয়েছে মিটিংয়ে।
তিনি বলেন, এটা খুব পরিষ্কার যে মোদী আতঙ্কিত যে আমরা একজোট হয়েছি। গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছে। সমস্ত নেতারা একজোট হয়েছে। সমস্ত দেশে একজোট হয়ে মিটিং হবে। সামনের মাস থেকে আরও ঐক্যবদ্ধতা দেখতে পাবেন। আরও অনেকে ইন্ডিয়া জোটে যোগ দেবেন। ভারতকে বাঁচানো একটা বড় লক্ষ্য। এটা নিশ্চিত করা দরকার।
প্রশ্ন উঠেছিল তবে কি বাংলায় তৃণমূল আর সিপিএম একমঞ্চে বক্তব্য রাখবেন? বাস্তবে সেসব হয়নি। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করতে বামশক্তিকে শক্তিশালী করতে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি সীতারাম। সেই লড়াকু, তাত্ত্বিক বাম নেতাকে হারাল দেশ।