হাত থেকে মুখে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কার কারণেই কোভিড অতিমারীতে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন ধূমপায়ীরা, সতর্ক করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তা ছাড়া নিয়মিত ধূমপানের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত সংস্যায় তাঁদেরই বেশি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘Covid-19 অতিমারী এবং ভারতে তামাকের ব্যবহার’ বিষয়ক নথিতে মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছে, কোভিড সংক্রমণের শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি ধূমপায়ীদের এবং তাতে মৃত্যুর সম্ভাবনাও তাঁদেরই বেশি। এই কারণে সমস্ত তামাকজাত দ্রব্য বর্জনের জন্য মন্ত্রকের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে।
সিগারেট, বিড়ি, চুরুট ইত্যাদি ব্যবহারে আঙুল থেকে ঠোঁট স্পর্শ করে দেহে করোনাভাইরাস প্রবেশ করে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া হুঁকো ও গড়গড়ার মতো ধূমপানের উপযোগী সরঞ্জাম থেকেও জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগেই চারটি অসংক্রামিত রোগ- কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা, ক্যানসার, ক্রমিক ফুসফুসের সমস্যা এবং ডায়াবিটিসের উৎস হিসেবে তামাকের ব্যবহারকে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বলে সম্প্রতি জানিয়েছে মন্ত্রক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছে, ‘ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে, যার ঝেরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং যে কোনও জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। তামাকের মধ্যে উপস্থিতি রাসায়নিক রোগ প্রতিরোধকারী কোষের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ই-সিগারেট, ধোঁয়াহীন তামাক, পান মশলার মতো পণ্য হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যার আশঙ্কা জাগায়। এর ফলে শরীরের উর্ধ্বমুখী শ্বাসবাহী পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হৃদযন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।’
করোনাজনিত মৃত্যুর আধিক্য বিশিষ্ট দেশগুলির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, অসংক্রামিত রোগীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে বাতাসে উপস্থিত জলকণা বাহিত সংক্রমণ ঘটানোর কারণে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারে লালা নিঃসৃত ও নাকবাহিত জলকণার মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কোভিড-এর জীবাণু।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধূমপান না করলেও খৈনি, গুটখা, পান মশলা ও জর্দার মতো তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ফলে থুতু ফেলার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে। প্রকাশ্যে যত্রতত্র থুতু ফেলার কারণেও করোনা সংক্রমণ ছাড়াও টিউবারকিউলোসিস, এনসেফেলাইটিস ও সোয়াইন ফ্লু-এর মতো সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার ১২ গণ্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোক্সাইড-এর মাত্রা স্বাভাবিকে নেমে আসে। ধূমপান ছাড়ার ২ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ধূমপানের অব্যাস ছাড়ার ১ থেকে ৯ মাসের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দূর হয়।