১৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের IPO-র পরিকল্পনা বাতিল করল Snapdeal । ই-কমার্স সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রযুক্তি স্টকে বর্তমানে বাজারে মন্দা চলছে। আর সেই কারণে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব তাতে প্রভাবিত হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আপাতত এই সিদ্ধান্ত।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে IPO-র নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করেছিল Snapdeal। সেই একই বছরে বেশ কিছু ভারতীয় স্টার্ট আপ সংস্থা স্টক মার্কেটে প্রবেশ করেছিল। অনেক সংস্থা দারুণ IPO করলেও অনেকেরই শেয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু নতুন সংস্থাই শেয়ার বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা পিছিয়ে দিচ্ছে। আরও পড়ুন: অশনীর গ্রোভারের বিরুদ্ধে ৮৮ কোটি টাকার মামলা করল BharatPe, তহবিল তরছুপের অভিযোগ
চলতি সপ্তাহেই সেবি-র কাছে আইপিও প্রসপেক্টাস প্রত্যাহার করার আর্জি দায়ের করে স্ন্যাপডিল। রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, স্ন্যাপডিল এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থা উল্লেখ করেছে, 'বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে' এই সিদ্ধান্ত। এর পাশাপাশি অবশ্যই এটিও যোগ করা হয়েছে যে, স্ন্যাপডিল ভবিষ্যতে ফের আইপিও করার কথা পুনর্বিবেচনা করতে পারে। পুরোটাই সংস্থার মূলধন এবং বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করছে।
২০১০ সালে ই-কমার্স বুমের সময়েই স্ন্যাপডিল-এর পথ চলা শুরু। কুনাল বাহল এবং আইআইটি স্নাতক রোহিত বনসল এই সংস্থার সূচনা করেন। মূলত ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টসে বড়সড় ছাড়ের মাধ্যমে প্রাথমিক কয়েক বছরে প্রচুর গ্রাহক আকৃষ্ট করে স্ন্যাপডিল। তবে বর্তমানে ফ্লিপকার্ট ও আমাজনের মতো জায়ান্টের নিরিখে কিছুটা পিছিয়ে সংস্থা।
ভ্যালুয়েশনের পতন
২০১৬ সালে স্ন্যাপডিলের মোট ভ্যালুয়েশন ছিল ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেই সময় থেকে ক্রমেই সংস্থার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিন অর্থবর্ষে বিপুল লোকসান হয়েছে সংস্থার। আপাতত মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভ্যালুয়েসনের আইপিও-র মাধ্যমে নতুন তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছিল সংস্থা।
ফান্ডিং ভ্যালুয়েশন ও শেয়ার বাজারের ফারাক…
বিপুল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ফলে এক সময়ে স্টার্টআপ সংস্থাগুলি মোটা ভ্যালুয়েশন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাশামাফিক মুনাফা করতে পারেনি বহু সংস্থাই। গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেলেও লাভজনক হতে পারেনি। আর সেই কারণে শেয়ার বাজারেও ভাল পারফর্ম করেনি এই সংস্থাগুলির শেয়ার।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট ফার্ম Paytm (PAYT.NS)-এর শেয়ার বিপুল হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালে দেশের সবচেয়ে বড় আইপিও-গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেগা আইপিও ছিল পেটিএম। কিন্তু সেই সময় থেকে গত এক বছরে প্রায় ৭৬% পড়েছে সংস্থার শেয়ার। বিপুল খরচ, মুনাফার পদ্ধতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের মুখে ক্রমেই কমেছে সংস্থার শেয়ার দর। জোমাটোর শেয়ারের অবস্থা জানতে পড়ুন: গত ১০ বছরে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ IPO’ পেটিএম, এক বছরে দাম কমেছে ৭৫%
ফুড ডেলিভারি ফার্ম Zomato's (ZOMT.NS)-র শেয়ার ২০২১ সালের জুলাইতে বাজারে এসেছিল। সেই সময় থেকে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে শেয়ারের দাম। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ হিসাবে জোমাটো অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু সংস্থার মুনাফার কাঠামো নিয়ে সন্দিহান বাজার বিনিয়োগকারীরা। আরও পড়ুন: Zomato Lay-offs: প্রায় ৩% কর্মীকে ছাঁটাই করছে জোমাটো
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ন্যাপডিল উপলব্ধি করেছে যে, এমন বাজারে এলে তাদেরও শেয়ারের ভরাডুবি হতে পারে। এমনিতেই সংস্থার আগের মতো জনপ্রিয়তা নেই। ফলে প্রাথমিক শেয়ার অফারিংয়ের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হতে পারে। সেই কারণেই পিছিয়ে গিয়েছে তারা।
সংস্থার মূল বিনিয়োগকারী সফটব্যাঙ্ক, সিকোইয়া ক্যাপিটাল এবং অন্টারিও টিচার্স পেনশন প্ল্যান বোর্ড এই আইপিও-তে তাদের শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছিল।