সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট রাতারাতি বদলে দিল দক্ষিণ দিল্লির মালভিয়া নগরের অশীতিপর ধাবা মালিক কান্ত প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী বাদামি দেবীর ভাগ্য। কোভিড ভীতি তুচ্ছ করে দোকানে উপচে পড়ল ক্রেতার ভিড়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২.৩০ বাজতেই শেষ হয়ে গেল মালবিয়া নগরের একচিলতে দোকান বাবা কা ধাহার সব খাবার। বাইরে ক্রেতাদের লম্বা লাইন থাকা সত্ত্বেও ৩২ বর্গফিট দোকানের ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হলেন বছর আশির কান্ত প্রসাদ। এমন অভিজ্ঞতা তাঁর কখনও হয়নি।
গত ২৪ ঘণ্টায় আচমকা লোকের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লির এই অখ্যাত ভোজনালয়ের নাম, সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ফুড ব্লগারের ভিডিয়ো শ্যুট। ওই ভিডিয়ো নির্মাতার কাছে অকপটে দুঃখের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন কান্ত। জানিয়েছিলেন, কোভিড সংক্রমণের আতঙ্কে দোকানে খদ্দেরের দেখা পাওয়া ভার, আর রোজগারের একমাত্র উৎস হারিয়ে দিশেহারা তাঁদের তিন জনের সংসার।
সেই ভিডিয়ো বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ফুড ব্লগার, আর সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে কয়েক লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায় বৃদ্ধের আর্তি। পরের দিন দোকান খোলার আগেই ৭০-৮০ জনের লাইন জড়ো হয় শাটারের সামনে। অবস্থা দেখে সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখতে টহল দিতে শুরু করে পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর দোকান সম্পর্কে খবর চাউর হয়েছে, সে কথা বুধবার বিকেলে জানতে পেরেছিলেন কান্ত প্রসাদ। ছেলে আজাদ হিন্দের পরামর্শে তাই অন্য দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার রান্না করেছিলেন স্ত্রী বাদামি দেবী। খাদ্য তালিকায় অবশ্য কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। রোজকার মতোই ছিল ভাত, চাপাটি, ডাল, রাজমা, মটর পনির আর আলু পরোটা।
কোভিডের প্রকোপে গত কয়েক মাসে প্রায় মাছি তাড়ানোর পরে এর চেয়ে বেশি আয়োজন করার সাহস পাননি কান্ত প্রসাদ। কিন্তু তাঁদের তিন জনকে অবাক করে দুপুর গড়ানোর আগেই নিঃশেষ হয়েছে ভাঁড়ার। তবে খাবার শেষ হলেও অনেকেই এই পরিবারকে সাহায্য করতে কান্তর হাতে তুলে দিয়েছেন নগদ ও চেক। অভাবনীয় এই কাণ্ড দেখে কেঁদেই ফেলেছেন বৃদ্ধ।
এ দিন বাবা কা ধাবায় পাত পেড়েছেন স্থানীয় আম আদমি পার্টির বিধায়ক সোমনাথ ভারতীও। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই এই দোকানের খবর জেনেছেন নেতা। তিনি জানিয়েছেন, এলাকার এমনই ছোটখাটো খাবারের দোকানগুলির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাদের ব্যবসার হাল ফেরানোর চেষ্টা করবেন। টুইটারে তাঁর পোস্ট করা ছবি শেয়ার করে আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আবার ক্যাপশন জুড়েছেন, ‘দিল্লি দিলওয়ালোঁ কা।’
রোজগারের চেষ্টায় সত্তরের দশকে উত্তর প্রদেশের আজমগড় থেকে দিল্লি এসেছিলেন কান্ত প্রসাদ, সঙ্গে স্ত্রী বাদামি দেবী। প্রথমে শেখ সরাইতে ছোট চায়ের গুমটি খোলেন তাঁরা। তার পরে টাকা জমিয়ে তিরিশ বছর আগে খুলে ফেলেন বাবা কা ধাবা। প্রতিদিন গড়ে খাদ্য তালিকার প্রতিটি পদের একপ্লেট বিক্রি হয় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে। তবে অতিমারী পরিস্থিতিতে বিক্রি এসে ঠেকেছিল দিনে মাত্র পাঁচ প্লেটে, জানিয়েছেন আজাদ হিন্দ। ব্যতিক্রম গত বৃহস্পতিবার।
সাড়ে বারোটায় দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করলেও আলোকচিত্রীদের আবদারে ছোট জানলা খুলে হাসিমুখ দেখাতে হয়েছে কান্ত ও বাদামিকে। আর পরের দিন ফের হাজির হওয়ার প্রতিশ্রুতি শুনে আনন্দাশ্রুতে ভেসে ক্রেতাদের জোড়হাতে নমস্কার জানিয়েছেন বর্ষীয়ান দম্পতি।