রিয়েলিটি শো-কে হার মানিয়ে গেল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। হওয়ার কথা ছিল বন্ধ দরজার পিছনে আলোচনা। কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে এল সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট। সেই নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি। মান অভিমানের পালা। শেষ বিচারে অবশ্য যেটা প্রত্যাশিত ছিল সেটাই হয়েছে। আরও ছয় মাসের জন্য কংগ্রেসের রাশ থাকবে সোনিয়া গান্ধীর হাতে। এদিনের পর কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে সেই নেতারা যারা নেতৃত্ব বদল চেয়েছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় অবশ্য বিক্ষুব্ধ নেতারা গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠক সারলেন।
এদিনের কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে দলের সভাপতি হিসাবে কাজ করে যাবেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন যাতে নতুন প্রধান নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। এদিন সোনিয়া গান্ধী বলেন যে তিনি আর এই দায়িত্ব পালন করতে চান না। অন্য কেউ যেন দায়িত্ব নেয়। কংগ্রেস সংগঠনে বড়সড় পরিবর্তন ও নেতৃত্বে বদল চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন ২৩ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার পরেই এদিনের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেই চিঠি নিয়েই এদিনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
রাহুল গান্ধী বলেন যে সোনিয়া যখন হাসপাতালে ছিল, তখন এই চিঠি লেখা হল কেন। যারা চিঠি লিখেছে তারা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, এরকম কথা রাহুল বলেছিলেন বলে অনেকে দাবি করেছিলেন। তার ভিত্তিতে টুইটও করেন কপিল সিবাল অভিযোগ অস্বীকার করে। পরে অবশ্য কপিল জানান যে রাহুল তাঁকে ফোন করে বলেছেন যে তিনি এরকম কিছু বলেননি।
সোনিয়া গান্ধী বৈঠকের শেষে বলেন যে তিনি অস্থায়ী ভাবে প্রধান থাকতে রাজি আছেন কিন্তু এটা বেশি দিন চলতে পারেন না। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের তিনি বলেন যে তাঁদের অভিযোগে তিনি ব্যথা পেয়েছেন, কিন্তু কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই বা মনমালিন্য রাখতে চান না তিনি। সোনিয়া বলেন যে সবাই কংগ্রেস পরিবারের অংশ ও মতানৈক্য থাকলেও বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে লড়তে হবে।
তবে বিক্ষুব্ধদের বার্তা দিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি বলে যে কোনও ভাবেই কংগ্রেসের মানহানি করা যাবে না। দলের মধ্যের বিষয় বাইরে আলোচনা করা যাবে না বা মিডিয়ায় বলা চলবে না, এই বার্তাও দেওয়া হয়।
এদিন চিঠির প্রেরকদের বিশেষত গুলাম নবি আজাদকে একহাত নেন অন্য গোষ্ঠীর নেতারা।এদের নেতৃত্বে ছিলেন রাহুল গান্ধী যিনি তোপ দাগেন বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে। প্রায় ৫০ জন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
চিঠিটিকে নিষ্ঠুর বলে অভিহিত করেন একে অ্যান্টনি। চিঠির প্রেরকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন অম্বিকা সোনি। চাপের মুখে রাজ্যসভার দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তাব দেন আজাদ। নিজের শুরুর বক্তব্যেও আজাদের কথা দুইবার বলেন সোনিয়া। সেই শুরু, তারপর থেকে দলে দলে নেতা আজাদকে আক্রমণ করেন। সোনিয়া গান্ধীর প্রশংসা করেন। মোটের ওপর ছিল চেনা চিত্রনাট্য।
সন্ধ্যাবেলায় কপিল সিবাল, শশী থারুর সবাই বৈঠকে বলেন গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে। ছিলেন মুকুল ওয়াসনিক, মণীশ তেওয়ারি ও অন্যান্য নেতারা। তবে বৈঠকে কি কথা হয়েছে, সেটা জানা যায়নি। এখনকার মতো নেতৃত্বের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে হয়তো যাবে, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই নিয়ে কংগ্রেসে যে আরো অনেক জল বইবে, এদিনের বৈঠক সেটার দিকেই ইঙ্গিত করে।