ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে বদ্ধপরিকর ভারত। আগামী রবিবার (২৬ জানুয়ারি, ২০২৫) অনুষ্ঠিত হতে চলা সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই ভারতে পৌঁছে গিয়েছেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। তাঁর এই সফরেই দুই দেশের মধ্যে শক্তিসম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক সমঝোতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ ও দৃঢ় হয়েছে। একদিকে যেমন - বাণিজ্য ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নে দুই দেশ আরও কাছাকাছি এসেছে, তেমনই অন্যদিকে জি২০, ইন্দাস-অস্ট্রেলিয়া-ইন্দোনেশিয়া গ্রুপ-এর মতো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মঞ্চে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যেকার সম্পর্কে আরও উন্নত হয়েছে। নয়াদিল্লি নানাভাবে এটা স্পষ্ট করেছে যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাকার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রশক্তি।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে এটিই প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রথম ভারত সফর। যদিও ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে এর আগে ইন্দোনেশিয়ার আরও তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছেন। সুবিয়ান্তো সেই তালিকায় চতুর্থ সংযোজন।
বস্তুত, ভারতের প্রথম সাধারণতন্ত্র দিবস - অর্থাৎ - ১৯৫০ সালের সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ। পরবর্তীতে ২০১১ সালের প্রেসিডেন্ট সুসিলো ব্যামব্যাং ইউধোইওনো এবং ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট জোকো উইড্ডো (অন্যান্য এশীয় নেতা-সহ) ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছেন।
সুবিয়ান্তোর সফর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের বক্তব্য, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের এই ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে শক্তিসম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক সমঝোতাকেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সূত্রের দাবি, রবিবার সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগেই শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রাবোও সুবিয়ান্তো। সেই সময় দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্য়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যে বিষয়গুলিকে এই বৈঠকে অগ্রগণ্য হিসাবে ধরা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে - রাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ডিজিট্যাল প্রযুক্তি।
এই বৈঠক চলাকালীন দুই দেশের মধ্যে একাধিক মউ স্বাক্ষর করা হতে পারে। সেইসঙ্গে, একাধিক ঘোষণাও করা হতে পারে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোয়ার আনতে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সিইও-দের সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন সুবিয়ান্তো।
সূত্রের আরও দাবি, ভারত ও রুশ প্রযুক্তি নির্মিত ব্রাহ্মোস ক্রুজ মিসাইল সিস্টেম নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে দেশগুলি অত্যন্ত আগ্রহী, তার মধ্য়ে অন্যতম হল ইন্দোনেশিয়া। সেক্ষেত্রে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন সুবিয়ান্তো। প্রযুক্তির আদানপ্রদান সংক্রান্ত নিয়ে কোনও চুক্তি হতে পারে দুই দেশের মধ্যে।
তাছাড়া, ইন্দোনেশিয়ার এই মুহূর্তে অন্তত ১,৬০,০০০ চিকিৎসক ও নার্সের প্রয়োজন। ভারত সেই প্রয়োজন মেটাতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি, ইন্দোনেশিয়ার অ্যাসে প্রদেশ ও ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মধ্য়ে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা নিয়েও দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কথা হতে পারে।