তৃতীয় মোদী সরকারের আমলেই 'এক দেশে, এক নির্বাচন' ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তরফে অন্তত এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, এবছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে একথা ঘোষণা করেছেন। তাই, তৃতীয় মোদী সরকারও সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে বদ্ধপরিকর।
প্রসঙ্গত, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' হল এনডিএ শিবিরের দীর্ঘদিনের ভাবনা। তা কার্যকর করতে ইতিমধ্যেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটি তাদের রিপোর্টও পেশ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রস্তাব, প্রাথমিকভাবে লোকসভা এবং রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করা হোক। তার ১০০ দিনের মধ্যে সমস্ত আঞ্চলিক নির্বাচনগুলি একত্রে করা যেতে পারে।
মনে করা হচ্ছে, কমিটির এই প্রস্তাবে শীঘ্রই সিলমোহর দেবে আইন কমিশন। তবে, তাদের তরফেও কিছু প্রস্তাব রাখা হতে পারে। যেমন - সরকারের যে তিনটি স্তর রয়েছে, অর্থাৎ - লোকসভা, রাজ্য বিধানসভাসমূহ এবং পুরসভা, পুরনিগম ও গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো আঞ্চলিক প্রশাসন - এই তিনটি স্তরেই একত্রে নির্বাচন করানো হোক। সেই প্রক্রিয়া শুরু করা হোক ২০২৯ সাল থেকে।
পাশাপাশি, যদি কোথাও কোনও নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনও দলকে পাওয়া না যায় বা যদি কখনও অনাস্থা প্রস্তাব পাস করা হয়, তাহলেও যাতে সরকার গঠনে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে জোট সরকার গঠনের বিধিও নয়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় রাখা হবে।
উল্লেখ্য, গত মাসে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের নানা প্রান্তে বছরভর একাধিক নির্বাচন হয়। এতে দেশের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। এই কারণেই ভারতে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' প্রক্রিয়া চালু হওয়া দরকার বলে জোর গলায় দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এমনকী, এই দাবি ও যুক্তি সামনে রেখে দেশবাসীরও 'এক দেশ, এক নির্বাচন' ব্যবস্থাপনা চালু করার সমর্থনে এগিয়ে আসা উচিত বলে সেদিন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবারের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপিও তাদের ইস্তাহারে একই কারণে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' প্রক্রিয়া চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের আশা, এই প্রতিশ্রুতি পালনের বিষয়ে সমস্ত পক্ষই সহমত হবে।
যদিও বিরোধীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এই ভাবনার বিপক্ষে মত দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাদের বক্তব্য হল, বিভিন্ন সাংবিধানিক কারণেই ভারতে 'এক দেশ, এক নির্বাচন' প্রক্রিয়া কার্যকর করা সম্ভব নয়।
অন্যতম প্রধান সমস্যা হল, ভারতে লোকসভা নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে যে বিধানসভা নির্বাচনগুলি হয়, সেগুলির সময় ভিন্ন। অর্থাৎ একসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সবক'টি রাজ্য সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হবে, সেটা কখনই সম্ভব নয়। আর যদি পুরনির্বাচন বা পঞ্চায়েত নির্বাচন ধরা হয়, তাহলে তো বিষয়টি আরও জটিল।
বিরোধীদের প্রশ্ন, এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে সারা দেশের সবক'টি সরকার ও আঞ্চলিক প্রশাসনের নির্বাচনের সময়সীমা একত্রে সংযুক্ত করা হবে? সেটা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে বিজেপি-বিরোধীরা। পাশাপাশি, তাদের অভিযোগ, মোদী সরকারের প্রস্তাবে আইন সভা ভেঙে দেওয়া, রাষ্ট্রপতি শাসন এবং মিলিজুলি সরকার গঠন নিয়েও কোনও স্বচ্ছতা নেই।
আঞ্চলিক দলগুলির আরও একটি বিষয়েও আপত্তি রয়েছে। তাদের বক্তব্য, তাদের আর্থিক ক্ষমতা জাতীয় দলগুলির মতো নয়। ফলত, যদি একইসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন হয়, তাহলে প্রচারে এগিয়ে যাবে বড় ও সম্পদশালী দলগুলি। সেইসঙ্গে, জাতীয় ইস্যু যতটা প্রচারে আসবে, স্থানীয় ইস্যুগুলি ততটা গুরুত্ব পাবে না।
আরও একটি বড় সমস্যা হল, ইভিএমের সংখ্যা। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ইভিএমগুলি রয়েছে, সেগুলি বিভিন্ন নির্বাচনের সময় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, একসঙ্গে সারা দেশে সমস্ত নির্বাচন হলে আরও অনেক, অনেক ইভিএম লাগবে। তা তৈরি করতে প্রচুর টাকাও লাগবে। সেই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঠিক অঙ্ক কত? তার ব্যয়ভার বহনই বা কীভাবে করা হবে?
সরকার পক্ষের বক্তব্য, এর জন্য ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে।