দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় কি সাফল্য মিলবে? ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলকে গ্রেফতার করতে বুধবার ভোররাতে তাঁর বাসভবনে ঢুকে পড়লেন দক্ষিণ কোরিয়ার তদন্তকারীরা। যিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন জারি করার পরে ইমপিচমেন্টের মুখে পড়েছিলেন। সেই ঘটনার পরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারির মধ্যে তিনি রাজধানী সিওলের হান্নাম-ডংয়ের বাসভবনে থাকছেন। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে তার কাটার যন্ত্র, মই নিয়ে সেখানে এসেছেন শয়ে-শয়ে পুলিশ অফিসার। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, প্রবল ঠান্ডার মধ্যেই (প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সিওলের তাপমাত্রা মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস) বাসভবনের কাছে ইয়ুন-পন্থী লোকজন এবং পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। তবে পরিস্থিতি হাতের মধ্যেই ছিল।
বাসভবনের সামনে ইয়ুন সমর্থক ও পুলিশ
আগেরবার (৩ জানুয়ারি) যখন ইয়ুনকে আটক করতে যাওয়া হয়েছিল, তখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তদন্তকারীদের ইয়ুনের বাসভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারপর থেকে প্রতিদিন বরখাস্ত হওয়া প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে ইয়ুনের সমর্থক এবং বিরোধীরা জমায়েত করে যাচ্ছিলেন। সকলেরই ধারণা ছিল যে ইয়ুনকে আবার পাকড়াও করার চেষ্টা করবে পুলিশ।
আর বুধবার ভোররাতেই সেই ‘অভিযান’ শুরু হয়। ভোর চারটে নাগাদ ইয়ুনের বাসভবনের সামনে আসে পুলিশ। যেখানে আগে থেকেই কম্বল, পোস্টার নিয়ে বরখাস্ত হওয়া প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা ছিলেন। হাতে ছিল 'স্টপ দ্য স্টিল' প্ল্যাকার্ড। যে স্লোগানের মাধ্যমে নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে ইয়ুনের অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসন জারি করার পক্ষে সেই যুক্তি পেশ করে থাকেন ইয়ুন।
শান্তি বিঘ্নিত হলেই কঠোর ব্যবস্থা, হুঁশিয়ারি সরকারের
তারইমধ্যে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে বুধবার ইয়ুনের বাসভবনে ৩,২০০ অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে। সেই আবহে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মোক। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে 'যদি কোনও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে, তাহলে আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব।'
সামরিক শাসন জারি, ইমপিচমেন্ট ও গ্রেফতারির চেষ্টা
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসন জারি করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। যদিও কয়েক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি সেই সামরিক শাসন। তারপর ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে ইমপিচ করে দেয় সংসদ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যা যা ক্ষমতা ছিল, তা কেড়ে নেওয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।
যদিও ইয়ুনের আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে ইমপিচ হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারির যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা বেআইনি। জনগণের সামনে তাঁকে অপমান এবং অপদস্থ করতেই গ্রেফতারির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইয়ুনের আইনজীবীরা।