সংসদে সেনা ঢোকানোই কাল হল। বিদ্রোহের অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলকে গ্রেফতার করা হল। গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় যে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন, সেটার প্রেক্ষিতেই তাঁকে গ্রেফতারির মুখে পড়তে হল। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন, এতদিন যেখানে থাকছিলেন ইয়ুন, সিওলের সেই হান্নাম-ডংয়ের বাসভবন থেকে ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্টের গাড়ি বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্নীতি-বিরোধী এজেন্সির কার্যালয়ে। আর সেই গ্রেফতারির পরে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তরফে দাবি করা হয়েছে, সাংবিধানিক শৃঙ্খলা, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন ফেরানোর ক্ষেত্রে একটা প্রথম পদক্ষেপ। অনেকদিনের অপেক্ষার পরেও এই মাহেন্দ্রক্ষণ এলেও মানুষ আশ্বস্ত হলেন যে দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও ন্যায়বিচার আছে।
‘রক্তপাত’ গ্রেফতারিতে রাজি হয়েছেন, দাবি ইয়ুনের
যদিও ইয়ুন দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে 'বেআইনি' তদন্ত হচ্ছে জেনেও 'রক্তপাত' এড়াতেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তদন্তকারীদের হাতে। গ্রেফতারির মধ্যে একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'অগ্নিনির্বাপণের জিনিসপত্র নিয়ে আজ ওঁদের (পুলিশ অফিসার) যখন নিরাপত্তার জায়গায় ঢুকতে দেখলাম, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় যোগ দেব। এটা বেআইনি তদন্ত প্রক্রিয়া হলেও ভয়াবহ রক্তপাত এড়াতে (আমি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি)।'
ইয়ুনের আইনজীবীরা অবশ্য গ্রেফতারি এড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, সেটা যাতে দুর্নীতি-দমন এজেন্সি কার্যকর না করে, সেই আর্জি জানানো হয়। তাঁরা জানান যে ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই তদন্তের মুখোমুখি হবেন। যদিও সেই আর্জি খারিজ করে দেন দুর্নীতি-দমন এজেন্সির আধিকারিকরা। বরং বুধবার ভোররাতে ‘অভিযান’ শুরুর ঘণ্টাতিনেক পরে ইয়ুনকে বাসভবন থেকে বের করে আনা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক সংকটের ইতিবৃত্ত
১) গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসনের ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন। ১৯৮০ সালের পরে প্রথমবার সামরিক শাসনের ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও সেই সামরিক শাসন কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। কারণ জাতীয় সংসদে প্রস্তাবনা পাশ করিয়ে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল সামরিক আইন।
২) ১৪ ডিসেম্বর ইয়ুনকে ইমপিচমেন্ট করে দেওয়া হয়। যিনি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একেবারে অল্প ব্যবধানে জিতেছিলেন।
৩) ৩ জানুয়ারি ইয়ুনকে আটক করতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তবে সফল হননি। ১৫ জানুয়ারি অবশ্য সাফল্য মিলল। সেজন্য ৩,২০০ পুলিশ অফিসার মোতায়েন করা হয়।