শিশির গুপ্ত
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা সেনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে বিশেষ পাহাড়ি বাহিনী মোতায়েন করল ভারত। যে বাহিনীর জওয়ানরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উচ্চ অক্ষাংশে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পারদর্শী। কেন্দ্রের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র এই খবরে সিলমোহর দিয়েছেন।
নর্দান ফ্রন্টে লড়াইয়ের জন্য গত কয়েক দশক ধরে বিশেষ বাহিনীর জওয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবার তাঁদের আরও সামনের দিকে পাঠানো হয়েছে, যাতে চিন এলাকা দখলের চেষ্টা করলে পালটা জবাব দেওয়া যায়। পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ফৌজিরা সাধারণত রাস্তা দিয়ে সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে এগোয়। আর ভারতের বিশেষ পাহাড়ি বাহিনী গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষিত এবং উচ্চ এলাকায় লড়াইয়ে পারদর্শী। সেই নিদর্শন ইতিমধ্যে কার্গিল যুদ্ধে মিলেছেও।
এক প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান জানান, পাহাড়ে যুদ্ধের শিল্প সবথেকে কঠিন। শতকের পর শতক ধরে উত্তরাখণ্ড, লাদাখ, গোর্খা, অরুণচল প্রদেশ এবং সিকিমের জওয়ানরা সেই উচ্চতার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাই সেখানে যুদ্ধ হলে তাঁদের দক্ষতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে না। একেবারে নিখুঁতভাবে কামান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে হবে। নয়তো সেগুলি পাহাড়ের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ধারকাছেও দিয়ে যাবে না। নিশানা ব্যর্থ হবে।
প্রাকৃতিক গঠনও ভারতীয় সেনার পাহাড়ি বাহিনীর পক্ষে সহায়ক। চিনের দিকে তিব্বত মালভূমি কার্যত সমতল। কিন্তু ভারতের দিকে তা কারাকোরামে কে-২ শৃঙ্গ থেকে উত্তরাখণ্ডে নন্দাদেবী, সিকিমে কাঞ্চমজঙ্ঘা এবং অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তে নামচে বারওয়া দিয়ে শুরু হয়। বিদেশ মন্ত্রকের এক চিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পাহাড়ে শুধু ভূখণ্ড দখল করা কঠিন নয়, সেটা ধরে রাখা আরও কঠিন।’
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে যে সমর্থন আসছে, তাতে ভারত খুশি হলেও দিল্লিতে এখন অধিকাংশ মতই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর পক্ষে। নয়াদিল্লির অন্দরে কেউই তেমন সামরিক বা কূটনৈতিক সমর্থন চাওয়ার পক্ষপাতী নয়। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী বলেন, 'সশস্ত্র বাহিনীর গাড়ি এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে তৈরি আছে আমরা ব্যাটেলিয়ন। ভারত কোনও সংঘাতকে উসকে দেবে না বা প্ররোচনা দেবে না। কিন্তু যে কোনও বাড়বাড়ন্তের জবাব দেওয়া হবে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় হোঁচট খাওয়ার দিন শেষ। এটা স্নায়ুর লড়াই এবং ভারত অপেক্ষা করতে তৈরি, সে তুষার আসুক বা সূর্যরশ্মি আসুক।'
এই অবস্থায় গত ১৫ জুন গালওয়ানের সংঘর্ষের পর থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পুরো তৈরি ভারতীয় সেনা। তৈরি রাখা হয়েছে বায়ুঘাঁটি। স্ট্য়ান্ডবাইয়ে রয়েছে নৌবাহিনীও। তবে শুধু ভারত নয়, চিনা সেনাও একই অবস্থান নিয়েছে। ফলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ভারতীয় সেনা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জিনজিয়াং এবং তিব্বত এলাকায় চিন আরও বেশি সেনা জমায়েত করছে। পালটা হিসেবে সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে ভারতও। পাশাপাশি দু'দেশের বায়ুসেনা একে অপরের উপর কড়া নজর রেখেছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।