চিনের সঙ্গে ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার) চুক্তি স্বাক্ষর করল ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা। সেদেশের প্রেসিডেন্ট অনুরা দিশানায়েকের বেজিং সফরের মধ্যেই স্বাক্ষরিত হল এই চুক্তি। জানা গিয়েছে, চিনা তৈল সংশোধনাগার সংস্থা সিনোপেক শ্রীলঙ্কায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে। সূত্রের দাবি, 'এখনও পর্যন্ত এটাই হল শ্রীলঙ্কার মাটিতে সবথেকে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ'।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি, ২০২৫) শ্রীলঙ্কা ও চিনের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগে শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে বিদেশের যেকোনও ধরনের গবেষণাধর্মী জলযানের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের যৌথ বিবৃবিতে সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য ছিল না। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা ও চিন - দুই দেশের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, তারা 'জলপথে সহযোগিতা' অব্যাহত রাখবে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার জলভাগে 'গবেষণার কাজে' জাহাজ নোঙর করতে চেয়েছিল চিন। যা স্বাভাবিকভাবেই ভারতের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা এখনও পর্যন্ত অন্তত এর জন্য চিনের কোনও জাহাজকে অনুমতি দেয়নি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার নয়া প্রেসিডেন্ট হন দিশানায়েকে। তারপর থেকে এটি হল তাঁর দ্বিতীয় বিদেশ সফর। গত মঙ্গলবার চিনে পৌঁছন তিনি। সেখানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি ওইয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের মিডিয়া শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিনের সরকারি তৈল শোধনাগার সংস্থা সিনোপেক শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাংশে অবস্থিত হাম্বানটোটা এলাকায় একটি তৈল শোধনাগার নির্মাণ করতে ৩৭০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
সরকারি ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই 'অত্যাধুনিক' তৈল শোধনাগারটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২,০০,০০০ ব্যারেল এবং এই উৎপাদনের 'একটা বড় অংশ'ই রফতানি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে কলম্বোর পক্ষ থেকে হাম্বানটোটা বন্দরটি বেজিংয়ের সরকারি মালিকানাধীন 'চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোল্ডিংস' সংস্থাকে 'লিজ' বা ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু, পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কার পক্ষে যখন ঋণ শোধ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না, তখনই এ নিয়ে চিন্তা বাড়তে থাকে নয়া দিল্লির। কারণ, এক্ষেত্রে চিন যদি সামরিক কারণে বন্দরটি ব্যবহার করতে শুরু করে, তাহলে সেটা মোটেও ভারতের জন্য সুখবর হবে না।
ঠিক একই কারণে শ্রীলঙ্কা জলসীমায় চিনের 'গবেষক জলযান' নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিল ভারত। বস্তুত, ভারত ও আমেরিকার আপত্তির কারণেই সেবারের মতো শ্রীলঙ্কাকে নিরস্ত করা সম্ভব হয়েছিল। কলম্বো একবছরের জন্য তাদের জলসীমায় যেকোনও বিদেশি 'গবেষক জলযান'-এর আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আর এবার শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের কাছেই তৈল শোধনাগার নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করছে চিন!