খাবারের দাম আকাশচুম্বী, পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, যার জেরে ক্রমেই টান পড়ছে কোষাগারে। এমনই অবস্থা রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায়। জানা যাচ্ছে, কার্যত 'মানবিক সংকট'কে সঙ্গে নিয়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর তার সম্ভাবনা ২০২২ সালে আরও বাড়ছে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট।
রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি। এর আগে, গত ৩০ অগাস্ট শ্রীলঙ্কা সরকার দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সেই সময় শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে পড়ে যেতে থাকে। যার জেরে সেদেশে খাবারের দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক ঘাটতি ছাড়াও বাণিজ্যিক ঘাটতি বারবার দংশন করছে শ্রীলঙ্কাকাকে। ৩৩ বিলিয়ন বিদেশী ঋমের বোঝা আপাতত কলোম্বোর মাথায় উদ্বেগের মেঘ সঞ্চার করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ভিন দেশের কাছে শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা প্রবল হারে বেড়েছে। যার জেরে ২০১৯ সালে সেদেশে জিডিপি দাঁড়ায় ৪২.৬ শতাংশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি এভাবে সংকটের দিকে চলে আসার নেপথ্যে দেশের মন্থর গতির বৃদ্ধি দায়ী। যা বর্তমানে ৪ শতাংশ, এরসঙ্গেই রয়েছে দেনার দায়। আগামী ১২ মাসের মধ্যে দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে ৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সভারেন বন্ড রয়েছে।
বিদেশ ঋণের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে এনেছে শি জিনপিংয়ের দেশ। চিনের কাছে শ্রীলঙ্কার প্রচুর আর্থিক ঋণ শোধ বাকি রয়েছে। ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইতিমধ্যেই বেজিংয়ের কাছে ঋণ রয়েছে কলোম্বোর। তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসা সরকার দেশের আর্থিক দুর্যোগ কাটাতে চিনের কাছ থেকে বাড়তি ১ বিলিয়ন টাকা ঋণ নিয়েছে। যা ধীরে ধীরে শোধ করতে হচ্ছে কলোম্বোকে। ফলে ঋণের জালে কার্যত জর্জরিত ভারতের এই প্রতিবেশী।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-অক্টোবরের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৪.৮ বিলিয়ন বিদেশী ঋণ শোধ করতে হবে। এদিকে, গত নভেম্বরে সেদেশে মুদ্রাস্ফিতী রেকর্ড গড়ে ১১.১ শতাংশের অঙ্ক ছুঁয়েছিল। যার জেরে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দাম কার্যত সাধারণ মানুষের হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। যদিও অত্যাবশ্যকীয় খাবারের ক্ষেত্রে সরকার তার বেঁধে দেওয়া দামে সেনার মাধ্যমে সরবরাহ করছে। তবে তাতে সমস্যার সুরাহা সামান্যই হয়েছে। এই সংকটে যুক্ত হয়েছে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি। যদিও সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজাপক্ষে সরকার দেশের নেতা মন্ত্রীদের সমস্ত বিদেশ সফরের খরচে কাটছাঁট আনার পথে হেঁটেছে। এদিকে, ইরানের সঙ্গে তেল আমদানি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ঋণের অঙ্ক চা রপ্তানি করে মেটানোর পথে কূটনৈতিক রাস্তা দেখেছে শ্রীলঙ্কা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অল্পকালীন মেয়াদে এইভাবে সমস্যার সমাধান পেলেও, শ্রীলঙ্কা দীর্ঘকালীন ক্ষেত্রে কীভাবে সমস্যার সমাধান পেতে পারে, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।