অযোগ্যদের বাদ না দিয়ে কেন অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হল? তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। সার্বিকভাবে বৃহস্পতিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কার্যত রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন দুই বিচারপতির বেঞ্চ একেবারে সরাসরি রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে প্রশ্ন করে যে ‘কেন আপনারা সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করলেন? সেটার কারণ কী?’ যদিও রাজ্য সরকারের যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে খুব একটা প্রসন্ন হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বরং ভারতের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘ডাল মে কুক কালা হ্যায়? ইয়া ফির পুরো ডালা হি কালা হ্যায়?’
CBI যেমন দাবি করেছে, সেরকম দুর্নীতি হয়নি, দাবি রাজ্যের
তারইমধ্যে একটি রিপোর্টের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে জানান রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। নিয়োগ প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত সেই কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে শীর্ষ আদালত জানায়, কিছু অনিময় দেখা গিয়েছে। যদিও রাজ্যের আইনজীবী দাবি করেন, কমিটির রিপোর্টে কিছু অনিয়মের বিষয় সামনে এসেছে। কিন্তু সিবিআইয়ের রিপোর্টে যেমন দাবি করা হয়েছে, সেরকম মাত্রায় দুর্নীতি দেখা যায়নি।
অনিয়ম হতে দেখলে কী করবেন? রাজ্যের আইনজীবীকে প্রশ্ন
সেই সওয়ালের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, 'তাহলে ওরা (কমিটি) অনিয়মের হদিশ পেয়েছে। আর তাই ওই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অবৈধভাবে নিয়োগ হওয়া প্রার্থীদের ছেঁটে ফেলার পরিবর্তে আপনারা বললেন যে ঠিক আছে, সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি করে দিই?' সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'মিস্টার দ্বিবেদী, একটা জিনিস বলুন। যদি আপনি দেখেন যে কোনও অনিয়ম হয়েছে, তাহলে (যাঁরা অনিয়ম করেছেন), প্রথমে তাঁদের বাদ দিয়ে দেবেন না?'
সেটার প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী জানান, রায়ে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এটা ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ছিল। সেটার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ঠিক! কারণটা হল যে আপনারা কলঙ্কিত প্রার্থীদের বাদ দিতে চাননি।’
যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা যাবে, দাবি রাজ্যের
তারইমধ্যে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, কলকাতা হাইকোর্ট যে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের রায় দিয়েছে, সেটা যথাযথ নয়। আর সেই সওয়ালের পরেই সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায় যে অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে রাজ্য সরকার রাজি কিনা। তাতে সম্মতি জানান রাজ্যের আইনজীবী।
একই সওয়াল করেছেন কমিশনের আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, পুরো তালিকা থেকে অযোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করা যাবে। যে কমিশন ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল যে ১৯,০০০ জনের বৈধ। আর সেই যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকাও দিতে পারবে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট কী বলল?
সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, যদি সেটাই হয়, তাহলে কেন কলকাতা হাইকোর্ট পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিল? বাতিল করে দেওয়া হল ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি? যদিও গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল যে এমনভাবে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলেছে, তাতে চাল থেকে কাঁকর আলাদা করা যাবে না।