ধানমন্ডিতে অশান্তির জন্য শেখ হাসিনার ঘাড়েই দোষ চাপাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভারতে বসে তিনি যাতে কোনও 'মিথ্যে এবং মনগড়া' বক্তব্য পেশ না করেন, তা নিশ্চিত করার জন্য দিল্লিকে প্রতিবাদপত্র দিল ঢাকা। সেইসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ভারতে বসে হাসিনা যে ভাষণ দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘স্বাস্থ্যকর’ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মোটেও সহায়ক নয়।
আর বাংলাদেশের তরফে সেই মন্তব্য করা হয়েছে বুধবার রাতে হাসিনার ভাষণের পরে। ইউনুসের সরকারের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। আর তাঁর ভাষণের মধ্যেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি) ভাঙচুর চালানো হয়। লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কার্যত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেই বাড়ি। যে বাড়িটা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকালীন জায়গা করে নিয়েছিল, সেটাকে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে হাসিনাদের যোগ থাকা অন্যান্য বাড়িতেও।
জুলাই বিপ্লবের মৃতদের অপমান হাসিনার, দাবি বাংলাদেশ সরকারের
সেই ভাঙচুরের ঘটনার জন্য হাসিনাকেই দায়ি করেছে ইউনুস সরকার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতা করে উস্কানিমূলক ভাষণ দেন হাসিনা। ওই আন্দোলনের সময় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের অপমান করেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন। আজগুবি গল্প ফেঁদেছেন। সেইসঙ্গে আগের মতোই হুমকির সুরে হাসিনা কথা বলেছেন বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে।
ভারতে বসে ‘হিংসাত্মক আচরণ’ হাসিনা, দাবি ইউনুসদের
বাংলাদেশ সরকারের তরফে আরও দাবি করা হয়েছে যে গত বছরের অগস্টে হাসিনার পতনের পর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে কোনওরকম বিপত্তি ঘটেনি। চালানো হয়নি হামলা। কিন্তু বুধবার রাতে হাসিনা যে ‘হিংসাত্মক আচরণ’ করেছেন, তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে মুজিবর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Yunus on Indian Map: চিনকে বন্ধু বলে ভারতের মানচিত্র নিয়ে টিপ্পনি মহম্মদ ইউনুসের, বিশেষ কোনও ইঙ্গিত?
আর সেই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে যাতে এরকম ভাষণ দেওয়া থেকে বিরত করা যায়, তা নিয়ে ভারতকে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে। ঢাকার তরফে দাবি করা হয়েছে, হাসিনা যে বারবার 'মিথ্যা ও মনগড়া' মন্তব্য করেছেন, তাতে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের ভাবাবেগে আঘাত করছে। সেই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে থামানোর আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ। যে হাসিনা গত ৫ অগস্ট থেকে ভারতে আছেন।
মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ?
যদিও বাংলাদেশ সরকারের সেই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে ইউনুস সরকার? বুধবার রাত থেকে যখন এরকম তাণ্ডব চলছে, তখন কার্যত হাত গুটিয়ে কেন বসেছিল? সেই ঐতিহাসিক বাড়ি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পরে স্রেফ মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ?