প্রথমবার রাজ্যসভায় সুধা মূর্তি। তুলে ধরেছেন দেশের সবচেয়ে বড় দু'টি ইস্যু। রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর, উচ্চকক্ষে আলোচনায় অংশ নিয়ে একের পর এক বিষয় উত্থাপন করলেন তিনি। প্রথমত, সার্ভিক্যাল অর্থাৎ জরায়ু মুখের ক্যানসারের কোপে সারা দেশ, মেয়েদের বাঁচাতে হলে শীঘ্রই টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। দ্বিতীয়ত, দেশের পর্যটন শিল্প থেকেও বেশ কিছু খামতি তুলে ধরেছেন ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন।
রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য সুধা মূর্তি দাবি করেছেন, করোনার সময় যেভাবে টিকাকরণ অভিযান চালানো হয়েছিল, সেভাবেই মহিলাদের জরায়ু ক্যানসার থেকে রক্ষা করার জন্য একটি টিকা প্রচারা অভিযান চালানো উচিত। অর্ধেক জনসংখ্যার মধ্যে এই রোগের কেস খুব দ্রুত বাড়ছে। তাঁর আরও দাবি, আমাদের সমাজব্যবস্থা এমন যে নারীরা, নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই কোনও মহিলা যদি কখনও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে পৌঁছোন, তখনই জানা যায় যে তার জরায়ুর ক্যানসার তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে ওই মহিলাকে বাঁচানোও কঠিন হয়ে পড়ে। মূর্তির দাবি, বাবা বলতেন নারীরা পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। মহিলার মৃত্যুর পর স্বামী অন্য স্ত্রী পেলেও সন্তানরা আর মাকে পায় না।
তাঁর আরও দাবি যে সরকার কোভিডের সময় দায়িত্ব সহকারেই, সারা দেশকে ভ্যাক্সিন দিয়েছে। তাই ৯-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের সার্ভিকাল টিকা প্রদান করাও খুব একটা কঠিন নাও হতে পারে। সার্ভিকাল টিকা পশ্চিমে তৈরি করা হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে এই টিকা। স্বাস্থ্য সুবিধাও দিচ্ছে এটি। খুব একটা ব্যয়বহুলও নয়। টিকার দামের প্রসঙ্গ তুলে সুধা মূর্তি বলেছেন, আজ আমার মতো যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এটি ১,৪০০ টাকা। আর সরকার যদি হস্তক্ষেপ করে এবং এই বিষয়টি ভেবে দেখে, তাহলে অবশ্যই টিকাটি ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে কিনে ফেলা যাবে। আমাদের দেশে এত বড় জনসংখ্যা, ভবিষ্যতে আমাদের মেয়েদের জন্যই এটি উপকারি হবে।
আরও পড়ুন: (Modi on BJP govt's term: আমাদের সরকার ১০ বছর পূর্ণ করেছে, আরও ২০ বছর বাকি! অঙ্ক কষে কংগ্রেসকে খোঁচা মোদীর)
ভারতের পর্যটন শিল্পের খামতিও নজর কেড়েছে সুধা মূর্তির
এছাড়াও, পর্যটনের কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, মানুষ অজন্তা, ইলোরা, তাজমহল দেখতে যান। কিন্তু দেশে ৫৭টি এমনই ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণাটকের শ্রাবণবেলা গোলায় বাহুবলী মূর্তি, লিঙ্গরাজ মন্দির, ত্রিপুরার উনাকোটি শিলা খোদাই, মহারাষ্ট্রের শিবাজি দুর্গ, মিতাওয়ালির চৌসাথ যোগিনী মন্দির, গুজরাটের লোথাল এবং গোল গুম্বাদ ইত্যাদি। যেগুলি সম্পর্কে তেমন কোনও প্রচারণাও করা হয়নি বা জনগণও এই বিষয়ে জানেন না।
তিনি জানিয়েছেন, শ্রীরঙ্গমের মন্দিরগুলো চমৎকার। সারনাথের ২৫০০ বছরের পুরনো স্মৃতিস্তম্ভগুলির, এখনও তো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে নেই। মধ্যপ্রদেশের মিতাওয়ালিতে হাজার বছরের পুরনো চৌসাথ যোগিনী মন্দির থেকে পুরনো সংসদ ভবনের নকশার প্রোটোটাইপিংও করা হয়েছে। মূর্তির কথায়, ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভারতের মানুষই সচেতন নন। তাই সরকারের উচিত, এই প্রত্যেকটি সাইটকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। এমনটাই দাবি করেছেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির স্ত্রী এবং ইউকে-র প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শাশুড়ি সুধা মূর্তি।