করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের পর থেকেই চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন যৌনকর্মীরা। তাঁদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়া নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যগুলির প্রতিক্রিয়া চাইল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় অবিলম্বে তাঁদের কিছু দেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়টিও কেন্দ্রকে বিবেচনা করতে বলল শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি এলএন রাও এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের বেঞ্চ বলে, 'এটা মানবিক সমস্যা। রেশন কার্ডের জন্য অনেক রেশন পাচ্ছেন না। তাঁরা প্রচণ্ড দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।'
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে দরবার মহিলা সমন্বয় কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, মার্চের শেষ লগ্নে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে যৌনকর্মীরা কোনও কাজ পাচ্ছেন না। ফলে উপার্জন শূন্যে ঠেকেছে। নিজেদের যতটুকু জমানো অর্থ ছিল, তা দিয়ে এপ্রিল ও মে মাসে তাঁরা দিন গুজরান করেছেন। অনেকে আবার চড়া সুদে ধার নিতে বাধ্য হয়েছেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যক্তিগত কারোর উপর নির্ভর করে দিন কাটাচ্ছেন অধিকাংশ যৌনকর্মী।
কমিটির আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার বলেন, 'যৌনকর্মীদের সবথেকে প্রয়োজনীয় হল খাদ্য। অন্ধপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তেলাঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুর মতো পাঁচ রাজ্যে মূল্যায়ন করা দেখা গিয়েছে যে ১.২ লাখ যৌনকর্মীর মধ্যে মাত্র ৫২ শতাংশ রেশন পান। অন্যান্য শহরে অবস্থা আরও খারাপ।'
গ্রোভারের দাবি করেন, কার্ড ছাড়াই দেশজুড়ে যৌনকর্মীদের বিনামূল্যে রেশন বিলির নির্দেশ দেওয়া হোক। কারণ অধিকাংশ যৌনকর্মীর পরিচয়পত্র নেই। যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে জনস্বার্থ মামলা উল্লেখ করে তিনি জানান, গত ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সেই প্রস্তাব দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই প্রস্তাবে বলা হয়, 'নথিতে পেশা উল্লেখ না করেই ঠিকানা যাচাইয়ের নিয়ম বা প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত কঠোরতা কমিয়ে সব রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে যৌনকর্মীদের রেশন দিতে হবে।'
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জাতীয় এডস নিয়্ন্ত্রণ সংস্থার (ন্যাকো) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৮.৬৮ লাখের বেশি মহিলা যৌনকর্মী আছেন। ১৭ টি রাজ্যে বৃহন্নলার সংখ্যা ৬২,১৩৭ । তাঁদের মধ্যে ৬২ শতাংশ যৌন পেশায় যুক্ত।
কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল আরএস সুরি শীর্ষ আদালতে জানান, উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় যৌনকর্মীদের সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। যদিও গ্রোভার জানিয়েছেন, ওই পাঁচ রাজ্যের সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র আট শতাংশ যৌনকর্মী সেই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। পাশাপাশি যৌনকর্মীরা ওষুধ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, নিজেদের সন্তানের স্কুল ফি'র ইনসেনটিভ এবং বৃদ্ধা ও বিধবাদের জন্য বার্ধক্য ভাতারও দাবি জানিয়েছেন।
সওয়াল-জবাবের পর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় যৌনকর্মীদের অবিলম্বে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অবিলম্বে প্রদান করার বিষয়টি কেন্দ্রের তরফে বিবেচনা করে দেখা হোক। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর।