রাজ্য সরকার পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি বহাল রাখায় অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে মিশ্র মতধারার সওয়াল শুনল সুপ্রিম কোর্ট।
নিজের সিদ্ধান্তের সপক্ষে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার যুক্তি দেয়, ছোটবেলায় ইংরেজি ভাষা শেখা পড়ুয়ারা মাতৃভাষায় পড়াশোনা করা সতীর্থদের চেয়ে পরবর্তীকালে শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো ফল লাভ করে।
রাজ্য সরকারের তরফে সরকারি আইনজীবীর এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, ‘আপনাদের এই যুক্তি কেন্দ্র করে অজস্র মতবাদ পাওয়া গিয়েছে। আপনাদের মতামতই এই বিষয়ে শেষ কথা হতে পারে না।’
আগামী সপ্তাহে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। বলা হয়েছে, একই সঙ্গে অনুরূপ আর একটি মামলারও শুনানি হতেচলেছে। ওই মামলায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত কন্নড় ভাষা শিক্ষার জন্য কর্নাটক সরকারের নির্দেশের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে একাধিক স্কুল।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিলে ২০২০ সাল থেকে স্কুলে ইংরেজিতে পঠনপাঠন ও নির্দেশে অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের জারি করা নির্দেশ খারিজ করে দেয় অন্ধ্র প্রদেশ হাই কোর্ট।
অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের তরফে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী কে বি বিশ্বনাথন সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ‘আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি যে, ৯৬% বাবা-মা সরকারি স্কুলে অধ্যনরত তাঁদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করানোর দাবি জানিয়েছেন। এই কারণেই প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজিতে পঠনপাঠন আবশ্যিক করা হয়েছে। আমরা তেলুগুকে অগ্রাহ্য করছি না। প্রত্যেক মণ্ডলে একটি করে স্কুল থাকবে যেখানে তেলুগু মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকবে। এবং বিনামূল্যে পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশের জেরে আমরা সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছি না। এতে রাজ্যের দরিদ্র ও প্রান্তিক পড়ুয়াদের জীবনে প্রভাব পড়ছে।’
এই আবেজনন শুনে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ বলে, ‘বিষয়টি এত সহজ নয়। ইংরেজি ও মাতৃভাষায় পঠনপাটন নিয়ে নানান অভিমত চালু রয়েছে। অনেক দেশ রয়েছে যেখানে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা মাতৃভাষাতেই হয়। আপনার যুক্তি শুনে মনে হচ্ছে একমাত্র আপনার মতটিই প্রযোজ্য হয়। ব্যক্তিগত ভাবে আপনার সঙ্গে সহমত হলেও আপনার মত অন্যের উপরে চাপিয়ে দিতে পারেন না। আমরা সামগ্রিক মতামত জানতে চাইছি।’
এতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বিশ্বনাথন বলেন, ‘মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার অনেক অসুবিধা রয়েছে। আমি কোয়েমবাত্তুরের এক প্রান্তিক গ্রামের বাসিন্দা। দেখেছি আমার যে সব বন্ধুমাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করেছেন, তাঁরা অনেকেই সুপ্রিম কোর্টে ভালো করে সওয়াল করতে পারেন না।’
জবাবে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, ‘আপনার দেওয়া উদাহরণ সর্বৈব অসত্য। স্কুল থেকে পাশ করে বেরোনোর পরে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছতে হলে বহু বছর ধরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে ইচ্ছে করলেই প্রকাশ্যে কথা বলা, যোগাযোগের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে শিখে ফেলা যায়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিশুর মাতৃভাষা শেখা জরুরি।’
এই সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, ‘আমি নিজে মাতৃভাষায় পড়াশোনা করেছি। আমার বহু সহকর্মী এমনকী বেশ কয়েক জন বিচারপতিও ওই মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছেন। রাজ্য সরকার বাড়াবাড়ি করছে।’
শিক্ষার অধিকার আইনের ২৯(২)(এফ) ধারা অনুসারে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ‘বাস্তবে যতদূর সম্ভব’ ইংরেজির ব্যবহার চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইন যাচাই করতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমীক্ষা করে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার। এই প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে সাংবিধানিক বেঞ্চের দেওয়া রায় উল্লেখ করে বিশ্বনাথন বলেন, শিক্ষার মাধ্যম বেছে নেওয়ার অধিকার অভিভাবকদের রয়েছে।