ভুয়ো ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার আদালত জানিয়েছে, এমন ব্যক্তিরা কোনও অপরাধমূলক কাজে ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হলে, তাদের এড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকে।
জনস্বার্থ মামলার ধাঁচে করা আবেদনে সেকেন্দ্রাবাদের বাসিন্দা ডামপালা রামরেড্ডি অভিযোগ করেছেন, তাঁর মেয়েকে জোর করে নিজের আশ্রমে রেখেছেন দিল্লির ধর্মগুরু বীরেন্দ্র দেব দীক্ষিত। তাকে রোহিনীর ওই আশ্রম থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ প্রকাশিত ভুয়ো ধর্মগুরুদের নামের একটি তালিকা খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন রামরেড্ডি।
ওই তালিকায় ১৭ জন ভুয়ো ধর্মগুরু ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেরা সাচ্চা সওদার গুরমিত রাম রহিম সিং, রাধে মা, নির্মল বাবা, রামপাল, আশারাম বাপু এবং তাঁর ছেলে নারায়ণ সাই। ওই তালিকাতেই রয়েছে উল্লিখিত দীক্ষিতেরও নাম।
আবেদনকারীর আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী আদালতকে ওই সমস্ত ভুয়ো ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ দিতে আর্জি জানান।
প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ জানায়, ‘আমরা আখড়া পরিষদকে অশ্রদ্ধা করছি না, কিন্তু আদালত কী করে বুঝবে কে ভণ্ড ধর্মগুরু? এই তালিকা বানিয়েছে আখড়া পরিষদ। আমরা জানি না, তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিষদের কোনও শত্রুতা রয়েছে কি না।’
গুরুস্বামী আবার জানান, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের মামলা রয়েছে, যার বেশ কয়েকটির তদন্তে নিযুক্ত রয়েছে সিবিআই। এই সব ভণ্ডদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে খুন, ধর্ষণ ও আর্থিক প্রতারণার মতো গুরুতর অভিযোগ। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে আদালতকে তিনি অনুরোধ জানান।
আইনজীবীর আর্জির জবাবে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, ‘মানুষ এই সব গুরুর কাছে যেন না যান,তার জন্য এই কারণই যথেষ্ট। আপনি এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কী কারণে চাইছেন?’
তবে পদক্ষেপ না করলেও আবেদনটি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছে, ‘যদি কেন্দ্রীয় সরকার আপনার সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে পারে, তবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’
প্রসঙ্গ, ২০২০ সালের ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে রামরেড্ডির আবেদনের প্রথম শুনানি হয়। সেই সময় আদালত বিষয়টি বিবেচনাকরে দেখার আশ্বাস দিয়েছিল। সেই সঙ্গে আবেদনের একটি কপি সলিসিটর জেনারেলকে আবেদনের একটি কপি পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে আবেদনটির বিরোধিতা করে বলেন, ‘দিল্লি হাই কোর্টে এর আগেই নিজের মেয়েকে উদ্ধার করতে আবেদন জমা দিয়েছেন রামরেড্ডি। আমরা তাঁর উৎকণ্ঠার বিষয়টি আলোচনা করতে পারি, কিন্তু আবেদনে যে প্রার্থনা জানানো হয়েছে, তার বিরোধিতা করছি।’
জবাবে আবেদনটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান গুরুস্বামী এবং তা স্বীকার করে নেয় বেঞ্চ। ওই আবেদনে উল্লিখিত ভুয়ো ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াও তাঁদের আশ্রম ও প্রতিষ্ঠানগুলি ফাঁকা করে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, আধ্যাত্মিক আশ্রম গঠন সংক্রান্ত শর্তাবলী তৈরি করে দিতেও আদালতের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল।