দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার উপর জোর দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মতে, বিচারে বিলম্ব হওয়া মানে ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়া। তাই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে বিচার বিলম্ব করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিচারে বিলম্বের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে জেল শুধু যে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে তাই নয়, বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাও হারিয়ে যায়। এই অবস্থায় সারা দেশের আদালতগুলিকে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যেন পদ্ধতিগত অদক্ষতার কারণে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়।
আরও পড়ুন: একাধিক গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন আসামির অধিকারের মধ্যে পড়ে না- SC
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের একটি বেঞ্চ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে দুর্বল করে তোলে এই ধরনের অযথা বিলম্ব রোধ করার জন্য বিচার পদ্ধতিতে জরুরি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, দ্রুত বিচারের অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই একজন অভিযুক্তকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, মাওবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে এক ব্যক্তি প্রায় পাঁচ বছর ধরে জেলে ছিলেন। তিনি জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিয়ে শীর্ষ আদালত জামিনের নীতি এবং দ্রুত বিচারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। বেঞ্চ বলেছে, ‘অনেকবার, আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, যে অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত দ্রুত বিচারের জন্য অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার রয়েছে। তাই বিলম্ব এবং জামিনের এই বিষয়টিকে তার প্রকৃত এবং সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করার সময় এসেছে।’
এর পাশাপাশি বিচারে বিলম্ব হওয়ার কারণে একজন অভিযুক্ত দীর্ঘ সময় ধরে জেলে থাকলে কী কী সমস্যা এবং প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়টিও তুলে ধরেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মতে, ‘যদি একজন অভিযুক্তকে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে ছয় থেকে সাত বছর কারাদণ্ডের পর চূড়ান্ত রায় পেতে হয়, তাহলে অবশ্যই বলা যেতে পারে যে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে দ্রুত বিচারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আগে জেলে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। তারা হয়তো চাকরি বা বাসস্থান হারিয়েছেন, জেলে থাকাকালীন ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষতি হয়েছে এবং মামলা লড়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। যদি কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলেও সম্ভবত তারা তাদের সম্প্রদায় থেকে বহু মাস ধরে কলঙ্কিত এবং এমনকী বহিষ্কৃত হয়েছেন।’
শীর্ষ আদালতের রায়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমরা বলব যে বিলম্ব অভিযুক্তদের জন্য খারাপ, ভুক্তভোগীদের জন্য, ভারতীয় সমাজের জন্য এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য অত্যন্ত খারাপ।’ এই অবস্থায় নিম্ন আদালতগুলিকে দক্ষতার সঙ্গে মামলাগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিয়েছে শীর্ষ আদালত।