যেহেতু কন্যাসন্তান, তাই বাবা-মা চাইলেই তার পড়াশোনায় খরচ করতে কার্পণ্য করতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের একটি পর্যবেক্ষণের নিরিখে এমনটা মতামত পোষণ করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সম্প্রতি একটি মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানায়, বাবা-মায়ের কাছ থেকে পড়াশোনার খরচ পাওয়ার 'অদম্য, আইনত এবং বৈধ' অধিকার রয়েছে কন্য়াসন্তানদের।
এমনকী, বাবা-মা যাতে তাঁদের সাধ্য মতো মেয়ের পড়াশোনায় খরচ করেন, তার জন্য তাঁদের বাধ্য করা যেতে পারে।
একটি বৈবাহিক সমস্যা সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন গত ২ জানুয়ারি এই পর্যবেক্ষণ করেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ।
অদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা এক দম্পতির একমাত্র মেয়ে আয়ারল্য়ান্ডে পড়াশোনা করছিলেন। তাঁকে তাঁর পড়াশোনার খরচ হিসাবে তাঁর বাবা ৪৩ লক্ষ টাকা দিতে চান। কিন্তু, ওই তরুণী সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দম্পতি পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন। বিবাহ বিচ্ছেদের খোরপোষ হিসাবে স্ত্রীকে মোট ৭৩ লক্ষ টাকা দিতে রাজি ছিলেন স্বামী। এর মধ্য়ে ৩০ লক্ষ টাকা তিনি সরাসরি দিতে চান স্ত্রীকে। এবং মহিলা সেই টাকা গ্রহণ করতে কোনও আপত্তি জানাননি। বাকি ৪৩ লক্ষ টাকা ওই ব্যক্তি বরাদ্দ করেন তাঁর মেয়ের জন্য। কিন্তু, তরুণী সেই টাকা নিতে রাজি হননি।
এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, কন্যাসন্তানের শিক্ষা গ্রহণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং এর জন্য তাঁকে তাঁর বাবা-মাও সাধ্য মতো খরচ দিতে বাধ্য। কিন্তু, এখানে সমস্যা ভিন্ন।
বাবা টাকা দিতে চাইলেও মেয়ে তা নিতে রাজি হননি। কারণ, সেটা তাঁর আত্মসম্মান বোধে আঘাত দিয়েছে। ওই তরুণী তাঁর বাবাকে বলেন, তাঁর জন্য বরাদ্দ অর্থ ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু, তরুণীর বাবাও সেই টাকা ফেরত নিতে রাজি হননি।
এখানের আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, ওই ৪৩ লক্ষ টাকা দম্পতির তরুণী কন্য়ার আইনত, বৈধ অধিকার। তাই এক্ষেত্রে এই টাকা তাঁর তরফে তাঁর বাবাকে বা মাকে ফেরত দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
তবে, এই মামলায় দম্পতির দাবি মেনে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জর করেছে শীর্ষ আদালত। আইনত তাঁদের বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
আদালতের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই এই ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। এরপর আর সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষ এই ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু করতে পারবেন না।
যদি, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির মধ্য়ে কোনও মামলা ঝুলে থাকে, তাহলে সেগুলিও প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এবং এরপর সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষই আর একে অপরের কাছ থেকে কোনও কিছু পাওয়ার দাবি করতে পারবেন না।