কয়েক বছর আগের কথা। কলকাতা হাইকোর্টে প্রবীণ নাগরিকদের মামলার শুনানি হতো বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চে। সেখানে দেখা যেত, বেশিরভাগ প্রবীণ নাগরিকরা তাঁদের সন্তানদের হাতে সম্পত্তি তুলে দিতেন দানপত্র করে। আর সেই দানপত্র করে সন্তানকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার পর সেই সন্তান বাবা–মাকে দেখে না বলে অভিযোগ। দানপত্র করা ওই সম্পত্তি ফেরাতে গেলে বিস্তর হ্যাঁপা পোহাতে হয়। তার ফলে চোখের জল ফেলতে হতো প্রবীণ নাগরিকদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ২০২২ সালের শেষে কলকাতা হাইকোর্ট এমন দানপত্রের সম্পত্তি ফেরানোর মামলায় মহকুমাশাসকের নির্দেশ খারিজ করে ছেলের পক্ষে রায় দিতে বাধ্য হয়। আর বৃদ্ধ বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু তারপরও সমস্যা মেটেনি। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটতে থাকে যে, বৃদ্ধ পিতা–মাতা সম্পত্তি নিজেদের জীবনে গড়ে তুলে শেষ বয়সে তা দানপত্র করে সন্তানের হাতে তুলে দেন। আর তারপর অবহেলার শিকার হয়ে আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন। কারণ এর আগে সুপ্রিম কোর্টও দানপত্র করা সম্পত্তি ফেরাতে মহকুমাশাসকের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তার জেরে পরাজিত বৃদ্ধ বাবা বিশ্বনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষের কথা মনে রেখে বিচারপতি রায়ে উল্লেখ করেন, সম্পত্তি লিখে দিলে সন্তান কর্তব্য পালন করবে সেই আশা করবেন না।
আরও পড়ুন: নতুন পোর্টাল খুলল কলেজ সার্ভিস কমিশন, নাম কী? কেমন সাহায্য পাওয়া যাবে?
এইরকম নানা রায় এবং সামাজিক ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়ছিলেন প্রবীণ নাগরিকরা। গোটা দেশেই এমন বহু নজির আছে যে, বৃদ্ধ বাবা–মা স্নেহ করে সন্তানকে জীবনের শেষ সম্বল লিখে দিয়েছেন। আর বিনিময়ে পেয়েছেন লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অবহেলা এবং ঘাড়ধাক্কা। এবার এই সামাজিক ব্যাধি আটকাতে এগিয়ে এল সেই সুপ্রিম কোর্টই। তাতে অবহেলিত বৃদ্ধ–বৃদ্ধাদের একটু স্বস্তি মিলল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সিটি রবিকুমার ও বিচারপতি সঞ্জয় করোলের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, এখন থেকে দানপত্র করে সন্তানকে দেওয়া সম্পত্তি দিলে তারপর যদি সন্তান বাবা–মাকে না দেখেন তাহলে সেই দানপত্র বাতিল করতে পারবেন মহকুমাশাসক বা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল।
এই রায় সামনে আসতেই এখন আশার আলো দেখছেন অবহেলিত বৃদ্ধ বাবা–মায়েরা। মধ্যপ্রদেশের এক বৃদ্ধা উর্মিলা দীক্ষিত এমনই মামলা দায়ের করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলায় এমনই রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়ের ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি বঞ্চনা হলে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই মহকুমাশাসকের হাতে ক্ষমতা দিয়েছে আইনসভা। প্রবীণ নাগরিক আইনের ২৩ নম্বর ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সিনিয়র সিটিজেনদের বিশেষ সুবিধা দিতেই ২০০৭ সালে আইন তৈরি হয়। ওই আইনের ২৩ নম্বর ধারা ব্যবহার করতে না দিলে বৃদ্ধ–বৃদ্ধাদের অধিকার রক্ষা করা যাবে না।