নির্বিচারে কারও বাড়ি ধ্বংসের বিরুদ্ধে নির্দেশিকা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার এই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। নির্বিচারে কারও বাড়ি ধ্বংসের মাধ্যমে 'বিচার' দেওয়ার এই বিষয়টিকে 'বুলডোজার ন্যায়বিচার' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে শীর্ষ আদালত। নিজের রায়ে এই 'বুলডোজার ন্যায়বিচারের' বিপদগুলিকে তুলে ধরেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, ফৌজদারি মামলায় জড়িতদের সম্পত্তি ধ্বংস করে বিচারক এবং নির্বাহক উভয়েরই কাজ করতে পারে না নির্বাহী বিভাগ বা প্রশাসন। অর্থাৎ, কে দোষী আর কে দোষী নয়, তা বিচার করার অধিকার নেই প্রশাসনের। (আরও পড়ুন: জনসমক্ষে মঞ্চে দাঁড়িয়ে TMC-কে সমর্থন কলকাতা পুলিশের অফিসারের? বিস্ফোরক সুকান্ত)
আরও পড়ুন: 'ভোট প্রভাবিত করতে পুলিশের কাণ্ড…', ভিডিয়ো পোস্ট করে বিস্ফোরক শুভেন্দু
বিচারপতি ভূষণ আর গাভাই এবং কেভি বিশ্বনাথনের একটি বেঞ্চ আজ এই মামলার রায় দিয়ে বলে, অভিযুক্ত বা অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে 'বুলডোজার ন্যায়বিচার' ব্যবহার করা যাবে না। শীর্ষ আদালত জোর দিয়ে বলে, আশ্রয় একটি মৌলিক অধিকার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। এই আবহে সংবিধানর ১৪২ নং অনুচ্ছেদের অধীনে থাকা ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কর্মকর্তাদের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশব্যাপী নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করা বাধ্যতামূলক। আধিকারিকদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। (আরও পড়ুন: অবশেষে সরকারি কর্মীদের বাড়ল ডিএ, ৩-৪ নয়... একলাফে ৭% বাড়ল মহার্ঘ ভাতা)
আরও পড়ুন: ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে মাস্ক, সঙ্গে পদ পেলেন বিবেক রামাস্বামীও
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়, এখন থেকে যদি কোনও বেআইনি নির্মাণও ভাঙতে হয় তাতেও সেই বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আগে থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাতে হবে। সেই নোটিশ পাঠানোর পর ১৫ দিন সময় দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। এরপর সেই বিষয়ে জেলাশাসককে জানানো হবে। জেলাশাসকের নিয়োগ করা নোডাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে উল্লেখিত নির্মাণটি ভাঙার কথা বিবেচনা করে দেখা হবে। (আরও পড়ুন: 'পারমাণবিক শক্তিধর...', ভারতকে নিয়ে কী ভাবেন 'ট্রাম্পের NSA' মাইক ওয়াল্টজ?)
আরও পড়ুন: LAC চুক্তির পর লাদাখে প্রথম দফায় টহল ভারত-চিনের, কীভাবে এড়ানো হচ্ছে সংঘাত?
উল্লেখ্য, এর আগে উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে 'বুলডোজার বিচার' নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, নিয়ম লঙ্ঘন করেই অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। এই আবহে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের নামই পড়ে গিয়েছে 'বুলডোজার সরকার'। এই আবহে অভিযোগ করা হয়, বিরোধী রাজনৈতিক মাদর্শের মানুষজনদের বাড়িকে নিশানা করে বুলডোজার চালানো হয়। উত্তরপ্রদেশকে অনুসরণ করে এই একই নীতি গ্রহণ করেছে আরও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। তবে এর জেরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় বলে দাবি করা হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে এভাবে নির্বিচারে বুলডোজার চালানোর বিরুদ্ধে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রেও বির্দিষ্ট নিয়মাবলীর রূপরেখা তৈরি করে দিল তারা।