শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে মহাবিকাশ অঘাড়ি সরকার ফেলে দেওয়া নিয়ে টানা ন'দিন শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যপাল সেই সময় ভুল করে থাকলেও এখন উদ্ধব ঠাকরেকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া খুবই কঠিন। গতকাল সওয়াল জবাব শেষে উদ্ধবের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, 'যদি সব খতিয়ে দেখে এটা প্রমাণিত হয় যে রাজ্যপাল ৩০ জুন (২০২২ সালের) আস্থা ভোট ডেকে ভুল করেছিলেন, তাহলে আপনারা কী নির্দেশিকা চাইবেন?' জবাবে আইনজীবী বলেন, 'আমরা চাইব যাতে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহাবিকাশ অঘাড়ি জোটকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।' এর জবাবে সুপ্রিম বিচারপতি পালটা প্রশ্ন করেন, 'আমরা এমন সরকারকে কীভাবে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারি যারা নিজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারার কথা স্বীকার করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিল?' (আরও পড়ুন: নবান্নর ডিএ আন্দোলনকারীদের নিজে চিনে নিতে চান মমতা, নেবেন কি কড়া ব্যবস্থা?)
সুপ্রিম কোর্ট বলে, 'যদি আপনারা আস্থা ভোটে অংশ নিতেন, তাহলে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত ভুল হলে আমরা তা বদলের নির্দেশ দিতাম। তবে আপনারা তো আস্থা ভোটে অংশই নেননি। এখন যদি আপনাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সাংবিধানিক অস্থিরতা তৈরি করবে।' এই নিয়ে এর আগে আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলে, 'আস্থাভোটের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সতর্ক হওয়া উচিত। কারম এতে সরকার পড়ে যেতে পারে। সরকার পড়ে যায়, এমন কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজ্যপালের যুক্ত হওয়া উচিত নয়। এ ভাবে চলতে থাকলে, শাসকদল থেকে দলে দলে লোকজন বেরিয়ে যেতে শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে শাসকদলকে সরকার থেকে উৎখাত করায় জড়িয়ে পড়বেন রাজ্যপাল। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এমনটা হওয়া কাম্য নয়।'
আরও পড়ুন: ডিএ-র দাবি জানানো সরকারি কর্মীদের 'লোভী' আখ্যা, বিস্ফোরক তৃণমূল রাজ্য সহসভাপতি
প্রসঙ্গত, বিবাদের শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি। সেই সময় মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকার ভাঙতে ৩০-এর বেশি বিধায়ক নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন একনাথ শিণ্ডে। কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে শিবসেনার জোট সরকারের পতন হয়। মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারান উদ্ধব ঠাকরে। এর মাঝে গুজরাট, অসম ঘুরে আসেন একনাথ ও তাঁর অনুগামীরা। শেষ পর্যন্ত গোয়া হয়ে মুম্বইতে ফেরেন একনাথ। মনে করা হচ্ছিল, বিজেপির সঙ্গে নতুন জোট সরকাররে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন একনাথ। তবে সবাইকে অবাক করে শিণ্ডেকেই মুখ্যমন্ত্রী করে দেয় বিজেপি। এদিকে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শিবসেনা থেকে 'বিতাড়িত' বন উদ্ধব ঠাকরে নিজেও।
একনাথ শিণ্ডে দাবি করেছিলেন, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক এবং সাংসদ যেহেতু তাঁর সঙ্গে, তাই 'আসল' শিবসেনা তাঁর গোষ্ঠী। এই আবহে আদালতের দ্বারস্থ হন উদ্ধব ঠাকরে। ততদিনে শিবসেনা দু’ভাগ হয়ে যায়। একনাথ শিণ্ডে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন শিবসেনার দখল নেওয়ার জন্য। এই আবহে সাময়িক ভাবে শিবসেনা নাম ও প্রতীক বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচন কমিশন। তবে গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশন শিবসেনা বিতর্কের অবসান ঘটান। এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কমিশন জানায়, একনাথ শিণ্ডের গোষ্ঠীই হল বালাসাহেবের তৈরি 'আসল' শিবসেনার নেতা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে শিবসেনার বর্তমান সংবিধান অগণতান্ত্রিক। কোনও নির্বাচন ছাড়াই অগণতান্ত্রিকভাবে একটি গোষ্ঠীর লোকদের পদাধিকার বলে নিয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দলের দখল রাখতে নিজের আস্থাভাজনদের নেতা পদে নিয়োগ করেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। তবে নির্বাচন কমিশন সেই নিয়োগকে বেআইনি আখ্যা দেয়। যদিও শিবসেনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে।