পুরোনো ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানের আসল নাম খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। সেই আবেদন আজ খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিভি নাগরত্নার বেঞ্চ অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দায়ের করা এই জনস্বার্থ মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই আবহে বিচারপতি কেএম জোসেফ বলেন, 'হিন্দুধর্ম একটি ধর্ম নয় বরং এটি একটি জীবনধারা... হিন্দুধর্ম একটি জীবনের বিধান এবং হিন্দুধর্মে কোনও গোঁড়ামি নেই... অতীতকে খুঁড়বেন না যা কেবল বৈষম্য সৃষ্টি হয় তাতে...দেশকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারেন না এভাবে।' (আরও পড়ুন: প্রেমিকাকে মেসেজ করায় বন্ধুর হৃৎপিণ্ড, যৌনাঙ্গ, আঙুল কেটে নিয়ে সেলফি তুলল যুবক!)
এর আগে উপাধ্যায়ের আর্জিতে বলা হয়েছিল, ভারতে যেসব জায়গার নাম 'হামলাকারীদের' নামে রাখা হয়েছে, মূলত সেই সব জায়গার 'আসল নাম' খুঁজে বের করার জন্য কমিটি গঠন করা হোক। তাঁর কথায়, দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে এবং 'মর্যাদার অধিকার, ধর্মের অধিকার এবং সংস্কৃতির অধিকার' সুরক্ষিত করতেই সর্বোচ্চ আদালতের এই পদক্ষেপ করা উচিত। তবে তাঁর এই কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করল না সর্বোচ্চ আদালত।
অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দাবি ছিল, সুপ্রিম কোর্ট যেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এমন এক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়, যাতে পুরোনো ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানের আসল নাম খুঁজে বের করা যায়। ভারতীয় সংবিধানের ২১, ২৫ এবং ২৯ নং ধারার অধীনে দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে এবং 'মর্যাদার অধিকার, ধর্মের অধিকার এবং সংস্কৃতির অধিকার' সুরক্ষিত করতেই এই পদক্ষেপের আর্জি জানানো হয়েছিল মামলাকারীর তরফে। পাশাপাশি আবেদনকারীর আরও দাবি, সুপ্রিম কোর্ট যেন ভারতীয় আর্কেওলজিকাল সার্ভে বিভাগকেও নির্দেশ দেয়, যাতে তারা প্রাচীন ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় স্থানগুলির প্রাথমিক নাম সংক্রান্ত গবেষণা করে এবং সেই নামগুলি প্রকাশ করে। সংবিধানের ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে 'জানার অধিকার' নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে আবেদনকারীর তরফে।
আবেদনে বলে হয়েছিল, 'এই ক্ষেত্রে নাগরিকদের অবেক বড় ক্ষতি হচ্ছে। কারণ ভগবান কৃষ্ণ ও বলরামের আশীর্বাদে পাণ্ডবরা খাণ্ডবপ্রস্থকে ইন্দ্রপ্রস্থতে (দিল্লি) রূপান্তরিত করেছিলেন। কিন্তু ভগবানের নামে একটি রাস্তা, পৌরসভা ওয়ার্ড, গ্রাম বা বিধানসভা কেন্দ্রও নেই দিল্লিতে। কৃষ্ণ, বলরাম, যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সেহদেব, কুন্তী, দ্রৌপদী এবং অভিমন্যু, কারও নামে কিছুই নেই। অন্যদিকে বর্বর বিদেশি হানাদারদের নামে রাস্তাঘাট, পৌরসভার ওয়ার্ড, গ্রাম ও বিধানসভা নির্বাচনী এলাকা রয়েছে। এটা শুধু দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থীই নয়, সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা মর্যাদা, ধর্মের অধিকার ও সংস্কৃতির অধিকারও লঙ্ঘন করে।'